ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার’ এর আমদানি শুল্ক (Custom Duty-CD) কমানোর দাবি করেছে এই খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। তারা প্রতি টন ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক ২শ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। বর্তমানে প্রতি টন ক্লিংকারের জন্য ৫শ টাকা শুল্ক দিতে হয়। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে ৭শ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সোমবার (১২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) এর সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির এ দাবি জানান। বিভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. আলমগীর কবির বলেন, সিমেন্ট খাতের বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর (Advance Income Tax এআইটি), বিদ্যুৎ সংকট, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, ঋণপত্র খোলার জটিলতা ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যার কারণে সিমেন্ট শিল্প খাত বর্তমানে এক কঠিন সময় পার করছে। এর মধ্যে ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হলে তা দেশের উদীয়মান খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম সিমেন্ট শিল্পের সব সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

তিনি বলেন, যে কোনো শিল্পের প্রধান কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি মূল্যের উপর প্রায় ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু ক্লিংকারে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক থাকায় বাস্তবে শুল্ক দিতে হচ্ছে ৭/৮ শতাংশ হারে। আর বাজেট প্রস্তাবনা অনুসারে প্রতি টনের ৭০০ টাকা শুল্ক দিতে হলে কার্যকর শুল্কহার দাঁড়াবে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। যা কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শিল্প-বান্ধব নয়।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কহার কার্যকর হলে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম কমপক্ষে ১৫/১৬ টাকা বেড়ে যাবে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সিমেন্টের বাজারে ভোক্তা সাধারণের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এবং সার্বিক নির্মাণ কার্যক্রমে গতি হারানোর উপক্রম হতে পারে বলেও জানান বিসিএমএ এর সভাপতি।
আলমগীর কবির আরও বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছি যে আমদানি পর্যায়ে এআইটি প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য্য করা যেতে পারে, কিন্তু এআইটি কে কোনক্রমেই চূড়ান্ত দায় হিসাবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। তাই উক্ত এআইটি কে সমন্বয় করার সুযোগ রাখার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি”।
তিনি বলেন, আমদানি পর্যায়ে ছাড়াও বর্তমানে বিক্রয় পর্যায়েও ২ শতাংশ হারে এআইটি ধার্য করা হচ্ছে এবং এআইটি কে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছে যে, বিজন্য পর্যায়েও এআইটি প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০ শতাংশ ৫০ শতাংশ ধার্য করা যেতে পারে, কিন্তু এআইটি কে কোনক্রমে চূড়ান্ত দায় হিসাবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। তাই এক্ষেত্রেও উক্ত এআইটি কে সমন্বয় করার সুযোগ রাখার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। তাছড়া সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা যেহেতু আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের উপর এআইটি ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছে, বিক্রম পর্যায়ের এআইটি প্রদান করা, দ্বৈত কর (Double Taxation) এর শামিল।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ এ অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর নিকট এই বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করার জন্য আবেদন করা হয় । এনবিআর তখন আশ্বাস দিয়েছিলো যে এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, ২০২০-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে এনবিআর এর দেওয়া এই আশ্বাসের কোন প্রতিফলন ঘটে নাই ।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ এ অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর নিকট এই বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করার জন্য আবেদন করা হয় । এনবিআর তখন আশ্বাস দিয়েছিলো যে এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, ২০২০-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে এনবিআর এর দেওয়া এই আশ্বাসের কোন প্রতিফলন ঘটে নাই ।
এছাড়াও অন্যান্য সংকটের কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে, ডলার সংকটের কারণে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন হচ্ছে এবং খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে ‘এল সি’ খুলতে গিয়ে বিরাট বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে সিমেন্ট খাতের শিল্প মালিকরা। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন বিঘ্ন হচ্ছে। একইসঙ্গে গ্যাস সংকটের কারণেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। জ্বালানি তেলের নাম বৃদ্ধির কারণে সিমেন্টের স্থানীয় পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সিমেন্ট রপ্তানির উপর নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকাতেও এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে মো. আলমগীর কবির সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যদি এই খাতটিকে অগ্রাধিকার খাতা হিসেবে ঘোষণা করে এবং ব্যাংক সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়; তাহলে সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের এই দুরাবস্থা কিছুটা হলেও কমবে এবং দেশের সিমেন্ট শিল্প খাত সুরক্ষিত হবে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, সিমেন্ট শিল্প একটি উদীয়মান আমদানি বিকল্প-শিল্প খাত। দেশের আবাসন সমস্যা সমাধান কল্পে, অবকাঠামো উন্নয়ন সহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে এই শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সিমেন্ট খাত দেশের রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং কমসংস্থানেও এই খাতের বিশেষ অবদান রয়েছে।
সমাধানের লক্ষ্যে, সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা সরকারের নিকট আবারও বিনীতভাবে জোড় দাবি জানাচ্ছে যে, বিশেষ করে সিমেন্ট শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ‘ক্লিংকার’ এর উপর কাস্টমস ডিউটি (Custom Duty-CD) বর্তমানে ঘোষিত প্রতি মেট্রিক টন ৭০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা ধার্য্য করার পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং এআইটি আমদানি ও বিক্রয় পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য্য করার জন্য যথাযথ নির্দেশ প্রদান করা হোক এবং এআইটি কে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা না করার জন্যও প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি প্রদান করা হোক।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...