ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতজুড়ে ব্যাপক নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কাশ্মীরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। বরং সেখানকার তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে স্থানীয় দুইটি রাজনৈতিক দল-ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে ৩৫ বছর ধরে বিদ্রোহ চলছে। এতে হাজার হাজার মানুষ নিহতও হয়েছে।

স্থানীয় এই শক্তিশালী দল দুইটি একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, উভয় দলই বলছে-তারা হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির বিরোধী। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে তারাও জোট করবে বলে জানিয়েছে দল দুইটির নেতারা।

বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে চার শতাধিক আসনে জয় পাবে বলে প্রচারণা চালিয়েছে। ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্যেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তাহলে কাশ্মীরে কেন লড়ছে না বিজেপি?

বিশ্লেষকসহ বিরোধী দলগুলো বলছে, নির্বাচনের ফলাফল সম্ভবত মোদির শান্তিপূর্ণ ও আরও সমন্বিত কাশ্মীর গড়ার বিরোধিতা করবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ হতে পারে এটা। কারণ ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা রদ করে, তাদের পৃথক সংবিধান বাতিল করে মোদি সরকার। উলটা কাশ্মীরকে নয়াদিল্লির কেন্দ্রীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন মোদি। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি দুইটি ফেডারেল শাসিত এলাকায় ভাগ হয়ে যায়। একটি হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকা। আরেকটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত লাদাখ।

সেই সময় কাশ্মীরে কঠোর লকডাউন চালিয়েছিল মোদি সরকার। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহসহ স্থানীয় প্রায় সব নেতাকে কয়েক মাস ধরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল।

২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি কাশ্মীরের তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তবে সবগুলোতেই আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্সের কাছে হেরেছিল। এ বছর বিজেপি জম্মুতে দুইটি ও লাদাখে একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মূলত কাশ্মীরকে বিভক্ত করার কারণেই ওই আসনগুলোতে জিতেছিল বিজেপি।

কারণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে ১৬ লাখ মুসলিম ভোটার ছিল। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরকে একত্র করায়, এর সঙ্গে পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলার ১০ লাখ হিন্দু ভোটার যোগ হয়েছে।

পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি বলেছেন, কাশ্মীরিদের ক্ষমতাচ্যুত ও বিচ্ছিন্ন করতে এবং মুসলিমদের শক্তিহীন করতেই মোদি সরকারের এই ব্যবস্থা। তারপরও এখানে সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি।

যদিও বিজেপির কাশ্মীর বিভাগের প্রধান রবিন্দর রায়না বলেছেন, নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি দলের বৃহত্তর কৌশলের অংশ ছিল। তার দাবি, বিজেপি সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও, এমন প্রার্থীকে সমর্থন করবে যে শান্তি, সুখ, ভ্রাতৃত্ব এবং গণতন্ত্রের জন্য কাজ করবে।

তবে বিজেপি এখনো ঘোষণা করেনি যে অনেক ছোট দলের মধ্যে তারা কোন দলকে সমর্থন করবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...