আসন্ন গ্রীষ্মে জ্বালানি তেল আমদানি করতে এবং জ্বালানি সংকট এড়াতে বাংলাদেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের শিল্প সমিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লেখা এক চিঠিতে একথা বলেছে।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের শিল্প সমিতির ওই চিঠিটি দেখেছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে লোডশেডিংসহ সংকট দেখা গিয়েছিল। আর তাই বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, চলতি বছর বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি আরও খারাপ হবে।
কারণ বাংলাদেশের মুদ্রার মান এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দ্রুত পতনের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে প্রধান জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বেড়ে গেছে।
রয়টার্স বলছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ইতোমধ্যেই অনেকটা বিঘ্নিত হয়েছে। আর এর জেরে ওয়ালমার্ট, গ্যাপ ইনক, এইচঅ্যান্ডএম এবং ইন্ডিটেক্স’স জারার মতো ক্লায়েন্টদের কাছে লাভজনক গার্মেন্টস শিল্প সরবরাহও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) গুরুত্বপূর্ণ এই জ্বালানি আমদানিতে অর্থ পরিশোধের জন্য মার্কিন ডলারের ঘাটতিকে দায়ী করেছে। সংস্থাটি বলছে, বেসরকারি জেনারেটরদের জ্বালানি সরবরাহের জন্য অর্থ পরিশোধ করতে আগামী জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি প্রয়োজন হবে।
এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি দেয় বিআইপিপিএ। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘জ্বালানি তেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির জন্য স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার অনুমতি দিতে এবং স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মার্কিন ডলার প্রদান করতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি…।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়টির দিকে নজর রাখছে। অবশ্য এর বিস্তারিত আরও কোনও তথ্য তিনি সামনে আনেননি। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ডলারের মজুদ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘ডলার সংকট কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।’
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের নেতৃত্বে ছোট বেসরকারি উৎপাদক এবং পাবলিক/প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।
অবশ্য বিদ্যুতের জন্য যে জ্বালানি প্রয়োজন হয় তার সিংহভাগই আমদানি করে বাংলাদেশ।
বিআইপিপিএ বলছে, বার্ষিক ফসল কাটার মৌসুমে সেচ, পবিত্র রমজান মাস ও আসন্ন উৎসব এবং আসন্ন গ্রীষ্মে গরম আবহাওয়ার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার অভাব থাকলে ইউটিলিটিগুলোকে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দিকে হাঁটতে হতে পারে।
রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশে তাপমাত্রা সাধারণত মার্চের শেষ থেকে বাড়তে শুরু করে এবং বিআইপিপিএ অনুমান করছে, ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে পরের চার মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের ২১ লাখ ২০ হাজার টন জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হবে।
আন্তর্জাতিক এই বার্তাসংস্থাটি বলছে, স্থানীয় গ্যাসের মজুদ হ্রাস এবং পর্যাপ্ত কয়লা-চালিত সক্ষমতার অভাব বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি তেলের মতো দূষণকারী জ্বালানির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য করেছে।
জ্বালানির উচ্চ বৈশ্বিক মূল্যের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০২২ সালে বাংলাদেশ তার তেল আমদানি কমাতে বাধ্য হয়। যার ফলে জ্বালানির ঘাটতি দেখা দেয় যা গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ মানুষকে অন্ধকারে থাকতে বাধ্য করে।