বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য প্রথমবারের মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। চুক্তিতে আগেই স্বাক্ষর করেছিলেন আর্জেন্টিনার ইকোনমিক মন্ত্রী সার্জিও টমাস মাসা। তার পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো কার্লোস সেসা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুই দেশের মধ্যে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এ সময় কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটওয়ারী, যুগ্ম সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন,এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বিশ্বের আরেকটি প্রান্তে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলে আমরা যেতে পারব। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আর্জেন্টিনা খুবই সম্পদশালী দেশ। কাজেই বৈশ্বিক পর্যায়ের সহযোগিতায় এটি একটি নতুন অধ্যায়। এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে গম ও সয়াবিন আমদানিসহ স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে। ফুটবলের মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক আছে, সেই সম্পর্ক কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরো বৃদ্ধি করবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আর্জেন্টিনা কৃষি ও কৃষি প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। আমরা আর্জেন্টিনা থেকে গম, সয়াবিনসহ গবাদিপশুর বিভিন্ন খাবার আমদানি করি। প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকি। পোল্ট্রির প্রোটিন নির্ভর করে সয়াবিনের ওপর। সয়াবিন উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি হচ্ছে আর্জেন্টিনা। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে আর্জেন্টিনা থেকে ভালো দামে গম ও সয়াবিন আনতে পারব। এছাড়াও তাদের সঙ্গে আরো কৃষিপণ্যের ব্যবসা হবে। আমাদের কৃষিকে উন্নত করতে তারা সহযোগিতা করবে। এছাড়া জলবায়ু সংকটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছি। অনেক কৃষিপণ্যে আমরা উদ্বৃত্ত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী দিনে উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প স্থাপনে আমরা আর্জেন্টিনার সহযোগিতা পাব। ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন ও জৈব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা আর্জেন্টিনার সহায়তা পাব।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আম ও আনারস রফতানি করতে পারে আর্জেন্টিনায়। আলুসহ চিপস রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত করে আর্জেন্টিনায় রফতানি করা যাবে। এছাড়া, বায়োটেকনোলজি ও ন্যানো টেকনোলজির ক্ষেত্রে দেশটির সহায়তা নেয়া যাবে।
আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো কার্লোস সেসা বলেন, কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অনেক সুযোগ রযেছে। সমঝোতা স্মারকের মধ্য দিয়ে সেসব খাতে কাজ করার সুযোগ আরো বাড়ল।
সমঝোতা স্মারকে সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো হলো— জলবায়ু স্মার্ট প্রযুক্তি, মাটি ব্যবস্থাপনা, প্রিসিসন কৃষি, সেচ ব্যবস্থাপনা, ফসল সংগ্রহোত্তর অপচয় রোধ, উত্তম কৃষি চর্চা বা গ্যাপ, কৃষিপণ্যের বিপণন ও ভ্যালু চেইন উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়।