সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে ১ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ কমেছে ২০১ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, গত জুলাই মাসে দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঠেকাতে বিগত সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া, কারফিউ ও ব্যাপক আন্দোলনের কারণে ব্যাংকিং কার্যক্রম ঠিকভাবে করা যায়নি। এজন্য অন্যান্য খাতের মতো কৃষিতেও ঋণ বিতরণ কমেছে। তবে ধীরে ধীরে এটি বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে কৃষি খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ খেলাপি। গত বছরের একই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কৃষিতে ঋণ ও খেলাপি দুটোই বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এজন্য সব সরকারই এই খাতে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত সপ্তাহে কৃষি নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন তহবিলগুলোও সক্রিয় করা হচ্ছে। এক কথায় চলতি অর্থ বছরে কৃষি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কী ধরনের সহায়তা দেওয়া যায় সে বিষয়েও চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে বরাদ্দ ঠিক করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ অংক অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও ব্যাংকগুলো ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৬.১৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে বিতরণ করেছিল ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।

আর চলতি বছরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা, বেসরকারি এবং বিদেশি বাণিজ্যিকগুলোর জন্য ২৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ৫৭৮ কোটি বা লক্ষ্যমাত্রার ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ১ হাজার ২১৩ কোটি বা লক্ষ্যমাত্রার ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রের বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটি এই সময়ের মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে ২৮৪ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ২ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকার ঋণ শোধ করেছেন কৃষকরা। গত বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় কমেছে ১৭৬ কোটি টাকা, যা একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম।

কৃষিঋণের মধ্যে দুই ভাগে অর্থাৎ শস্য-ফার্ম (যেমন : গবাদিপশু ও মৎস্য খামার) এবং নন ফার্ম খাতে ঋণ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে শস্যে ৭৩৪ কোটি, পোল্ট্রিতে ৪৭১ কোটি এবং মৎস খাতে ৩২৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নন-ফার্মে ২৬৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছর ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশের কম হতে পারবে না। এবার মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে, ১৩ শতাংশ মৎস্য খাতে এবং ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে।

ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার অর্জিত অংশ কৃষি খাতেই বিনিয়োগের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ) নামে একটি ফান্ড গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর অনর্জিত অংশ এ ফান্ডে জমা করতে হবে। এই জমা করা অর্থের বিপরীতে তাদেরকে ২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে। এই কমন ফান্ডে জমাকৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *