কারও ঘরে ইট ছুড়লে পিঠ পেতে রাখতে হয় পালটা পাটকেলের জন্যও শত্রু ঘায়েলের আদিম এ মহরতের শিকার হচ্ছেন এবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তিনি একা নন, সঙ্গে তার শাসন পাটের মন্ত্রী-এমপিরাও। সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিরাই শুধু আক্রমণের শিকার হবেন তা নয়, বিরোধীদলের এমপিদেরও ছাড় দেবে না দক্ষিণ কোরিয়ার কুকুর ব্যবসায়ীরা। কুকুরের মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করলে লাখ লাখ কুকুর ছেড়ে দেবে দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ির সামনে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে সেই খবরই দিয়েছে হংকং-ভিত্তিক দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
কুকুরের মাংস খাওয়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে কিংবদন্তি এক আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শাসকগোষ্ঠী ও বিরোধীদল উভয়ই একমত হয়েছেন এই আইন প্রণয়নের পক্ষে। দেশটির ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল পিপল পাওয়ার পার্টি সম্প্রতি কুকুরের মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ আইনের একটি খসড়া জমা দিয়েছে পার্লামেন্টে। কুকুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল বা ৫০ মিলিয়ন ওয়ান (৩৮ হাজার ইউএস ডলার) জরিমানার আইনও রেখেছে সেই বিলে। একই পথে হাঁটছে বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও। কুকুরে মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ চায় তারাও। কুকুর ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ৩০ মিলিয়ন ওয়ান জরিমানার দাবি জানিয়েছে দলটি। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সে দেশের কুকুর ব্যবসায়ীরা।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে একটি রেডিও নিউজ টকশোতে ব্যবসায়ীদের এমন পরিকল্পনার কথা জানান কোরিয়া ডগ মিট ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জু ইয়ং-বং। টকশোতে তিনি বলেন, ‘আমরা এতটাই ক্ষুব্ধ যে আমরা প্রেসিডেন্ট কার্যালয়, কৃষিমন্ত্রীর বাড়ি ও আইনপ্রণেতাদের অফিসের কাছে আমাদের পালন করা ২০ লাখ কুকুর ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছি।’ জু আরও বলেন, ‘কুকুরের মাংস খাওয়া মাদক পাচার অথবা পতিতাবৃত্তির মতো অপরাধ হতে পারে না। আপনি কি কখনো এমন শুনেছেন যে, একজনের কুকুরের মাংস খাওয়া অন্যদের ক্ষতি করছে?’ উলটো দিকে কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন প্রাণী অধিকার গোষ্ঠী। কোরিয়ান অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পশু অধিকারকর্মী চো হি-কিয়ং বলেন, ‘কুকুরের মাংসের ব্যবসা ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পক্ষে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে।
তিনি কুকুরের মাংসের ভোক্তাদের সংখ্যা হ্রাস এবং এটি খাওয়ার ফলে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন। ঐতিহাসিকভাবেই কুকুরের মাংস খেয়ে অভ্যস্ত কোরিয়ার জনসাধারণ। এটিকে গ্রীষ্মের তাপ মোকাবিলা করার একটি পদ্ধতি হিসাবে দেখা হয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে বর্তমানে ১ হাজার ১৫০টি কুকুরের খামার, ৩৪টি কসাইখানা, ২১৯টি বিতরণ কোম্পানি রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস পরিবেশনকারী রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০টি। মাংসের জন্য সাধারণত নুরেওঙ্গি প্রজাতির কুকুর প্রজনন করা হয়। স্টু জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এসব কুকুরের মাংস। চলতি বছরের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি কিম ২০২৭ সালে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কুকুরের মাংস খাওয়া বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন থেকেই এ ধরনের বিভিন্ন আন্দোলন বাড়তে থাকে।
গত বছর তিনি সিউল সিনমুন সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, ‘কুকুরের মাংস খাওয়া পরিহার করার অর্থ মানুষের সেরা বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধার একটি অভিব্যক্তি ও জীবনের প্রতি সম্মান।’
প্রসঙ্গত, সংবিধান মোতাবেকে দেশটিতে কুকুরের মাংস খাওয়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হলে এটি ২০২৭ সালে কার্যকর হবে। আইন প্রণয়নের পর কুকুরের মাংস ব্যবসায়ীদের সহায়তা করতে আর্থিক সহায়তাও দেবে সরকার।