কিছু বড় দেশ বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে একটি তাঁবেদার সরকার চায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কিছু (বড়) দেশ বাংলাদেশে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি তাদের চাটুকার হবে।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের রক্ত ঝরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও যেসব দেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন খুঁজছে তাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এর আগে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে এবং কমিশনকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন করেছে।
তারা (কিছু বড় দেশ) গণতন্ত্র ও নির্বাচনের অতীত সম্পর্কে নাও জেনে থাকতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ, তারা আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং ভোট দেওয়ার অধিকার খুঁজছে। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, যে পকেট থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রথমে হ্যাঁ/না ভোট এবং রাষ্ট্রপতির ভোটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির সংস্কৃতি চালু করে নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন এবং এরশাদ ও খালেদা জিয়া (জিয়াউর রহমানের স্ত্রী) জিয়ার পথই অনুসরণ করেন। বড় দেশগুলো সব সময় বিশ্বের সর্বত্র মাতবরি করার চেষ্টা করে।
রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অমানবিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের (বড় দেশ) তাদের মতো বন্ধু আছে তাদের শত্রুর কোন প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম ও মানুষ হত্যার কথা বলে এমন কিছু দেশকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ ও নূরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না। আমরা বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুনি রাশেদকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছি কারণ আমাদের বিচার বিভাগের বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের নেই। তারা এখন খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। খুনি ডালিম ও রশিদ পাকিস্তান ও লিবিয়ার মধ্যে তাদের আস্তানা পরিবর্তন করে চলছে, অন্য একজন খুনির হদিস এখনও পাওয়া যায়নি এবং বাকি খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। খুনিদের বিচারের জন্য আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি ছিলেন এবং তিনি খুনিদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন এবং তাদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোন্নাফী প্রমুখ।