রাজধানীর মিরপুরের কালশী এলাকায় বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ৪ জনকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার রাতে র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
গত ১৮ নভেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর মিরপুর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের বাসে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়।খবর বাসস।
আটকরা হলেন, আল মোহাম্মদ চাঁন (২৭), মো. সাগর (২৫), মো. আল আমিন ওরফে রুবেল (২৯) ও মো. খোরশেদ আলম (৩৪)। তারা বিএনপি’র কর্মী বলে জানিয়েছে র্যাব। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল, লালমনিরহাট, ফরিদপুর ও পঞ্চগড় জেলায় বলে জানা গেছে। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ৫ টি মোবাইল ফোন সেট জব্দ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলসমূহের বিভিন্ন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতংক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীরা রাজধানীর কাকরাইল, পল্টন, ফকিরাপুল ও মতিঝিলসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের উপর নৃশংস কায়দায় হামলা চালায়। তারা গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও সরকারি বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে। তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, আক্রমন, ভাংচুর করে। তাদের হামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও সাধারণ মানুষসহ অনেকে আহত এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতার সাথে জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে শনাক্তপূর্বক তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নজরদারী অব্যাহত রেখেছে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তাদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনায় আল মোহাম্মদ চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করে। চাঁন ও তার সহযোগী সাগর ও আলামিন ওরফে রুবেলসহ রাজধানীর মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড, সিরামিক রোড এলাকায় সুবিধামতো সময়ে যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য সেদিন রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত রেকি করে। আল মোহাম্মদ চাঁন যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে টাইগার এনার্জি ড্রিংক এর বোতলে ভরে ওই দিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেয়। পরবর্তীতে তারা ওই দিনে রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়কে রেকি করে। এসময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে পার্ক করা বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে তারা অগুন দেয়।
ঘটনার বিবরণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের উপরে দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা প্রদান ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। দলের অন্য সদস্যরা যাতে এ ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করে কৃতিত্ব নিতে না পারে সেজন্য চাঁন বাসে আগুন দেয়ার সাথে সাথেই খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিক তাকে পাঠাতে বলে। পরবর্তীতে চাঁন ধারণকৃত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কছে প্রেরণ করেছে বলে তারা স্বীকার করে।
র্যাবের মূখপাত্র বলেন, বসুমতি বাসে আগুন (ওই কাজের জন্য) চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও সে সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করে প্রদান করেছে। মূলত দলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণ করতো বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃতরা গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করে। তারা পল্টন এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন, সরকারি পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা ও সহিংসতার সাথেও জড়িত ছিল বলে জানা যায়।