ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

বিজ রিপোর্ট

পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে মো. জসিমউদ্দিন শেখকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অনুসন্ধানে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির নিয়ে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিএসইসি জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে মো. জসিম উদ্দিন শেখ, মো. এজি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযুক্ত মো. জসিম উদ্দিন শেখ এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগকারী ও শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তিনি চাঁদপুরে থাকেন। তার বিরুদ্ধে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে, কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে তিনি কত কোটি টাকা মুনাফা করেছেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পুঁজিবাজারে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে গুঞ্জন ছিল- আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বেড়েছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে বিএসইসি।

শেয়ার কারসাজির বিষয়ে বিএসইসির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৩) ভঙ্গের জন্য মো. জসিম উদ্দিন শেখকে এক কোটি টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৮ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে বিএসইসির অনুকূলে দণ্ডিত অর্থ ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে হবে। অন্যথায় অভিযুক্তর বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন শেখ বলেন, ‘এ অভিযোগের বিষয়ে কমিশনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর আমি প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের মতোই ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সেরও শুনানির ব্যাখ্যা প্রদান করেছি। আমি মূলত শেয়ার মার্কেটে পেশাদার ব্যবসায়ী নই। করোনাকালে আমরা পুঁজিবাজারে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছিলাম। আমাদের যাবতীয় শেয়ারের লেনদেন ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডার করে দিয়েছে। আর সে জন্য আমরা কমিশনের কাছে জরিমানা মওকুফের আবেদন জানিয়েছি। তবে এ জন্য আমাকে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও কোনো চিঠি পাইনি।’

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কারসাজির কারণে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দামে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। গত দুই বছরের মধ্যে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ৭৮.৫০ টাকায় নেমে আসে। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। পরবর্তীতে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর শেয়ারটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১০৬.৩০ টাকা। এরপর পরবর্তী বছর ২০২১ সালের ৪ মে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়য় ১৩৫.৯০ টাকায়। তার ৪ মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৪.৮০ টাকায়।

এ সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির কারণে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে আসে। যেকোনো কোম্পানির শেয়ারদর কোম্পানিটির ব্যবসা এবং আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে বাড়ে। কিন্তু, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম যেভাবে বেড়েছে, তা ব্যবসা ও মুনাফার তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এরপর থেকেই ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম পড়তে থাকে। প্রায় ১৩ মাসের ব্যবধানে সর্বশেষ রোববার (২৩ অক্টোবর) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫১.৪০ টাকায় লেনদেন হয়েছে, যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ১৪৪টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৪৭.৬১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ১৪.৯৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৭.৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ রয়েছে ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...