ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা দুটি অভিযোগের অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনকে ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জানাতে বলেছেন আদালত।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন।
আদালতে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কয়েকটি ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে নথিপত্র তলব করে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে , ঢাকা ওয়াসার এমডি বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পিপিআই সংক্রান্ত যেসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সে সংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে।
আরব বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেডের (এবি ব্যাংক) কারওয়ান বাজার শাখার ম্যানেজার বরাবর পাঠানো চিঠিতে কারওয়ান বাজার শাখায় ওয়াসার অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওয়াইসি, সিগনেচার কার্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের বিজয় নগর শাখার ম্যানেজার বরাবর পাঠানো চিঠিতে ওয়াসার অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওয়াইসি, সিগনেচার কার্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠানো চিঠিতে তলব করা নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইম্প্রুভমেন্টের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওআইসি, সিগনেচার কার্ড হিসাব খোলা ও পরিচালনা সংক্রান্ত সমিতির সকল রেজ্যুলেশন, ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইম্প্রুভমেন্টের নামে ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের তথ্য।
যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র, আর্থিক আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা চাওয়া হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র আর্থিক আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া সমিতির বর্তমান ও পূর্ববর্তী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যের নাম, পদবি (দাপ্তরিক ও সমিতির) বর্তমান কর্মস্থল, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছে।
একই চিঠিতে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পিপিআই প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও ব্যাংক ব্যালেন্স সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমিতির আয় ব্যয়ের হিসাব ও ব্যাংক ব্যালেন্স সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্রের কপি চাওয়া হয়েছে।
তলব করা নথিপত্র আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে সরবরাহের অনুরোধ করেছে দুদক।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। বিতর্কিত তাকসিম এ খানের পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ লেনদেন, পদ সৃষ্টি করে পছন্দের লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, অপছন্দের লোককে ওএসডি করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে।
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদদে ও নির্দেশে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে- এমন অভিযোগে তাকসিম এ খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। ওই মামলার তদন্তভার দুদকের হাতে ন্যস্ত হয়েছে।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।