ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

ওয়ান ব্যাংক থেকে নেওয়া ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মেয়াদী ঋণ সমন্বয়ের বিষয়ে কাট্টালি টেক্সটাইলকে বিএসইসির চিঠি

বিজ রিপোর্ট

ওয়ান ব্যাংক থেকে নেওয়া ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মেয়াদী ঋণ সমন্বয়ের বিষয়ে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কাট্টালি টেক্সটাইলকে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া, ব্যাংকটির কাছে কোম্পানির ঋণ সমন্বয়ের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) তহবিল ব্যবহার এবং আইপিওর অর্থ উত্তোলনের সময় কোম্পানির ঋণের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কমিশন।

কাট্টালি টেক্সটাইলে দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা পুনঃনির্ধারিত মেয়াদী ঋণের দায় সমন্বয়ের বিষয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন জানিয়েছে ওয়ান ব্যাংক। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাট্টালি টেক্সটাইলকে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

কাট্টালি টেক্সটাইলকে দেওয়া চিঠিতে বিএসইসি উল্লেখ করেছে, ওয়ান ব্যাংকের দেওয়া চিঠির বিষয়বস্তু উল্লেখ করে কোম্পানিটিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) এর অধীনে প্রাসঙ্গিক নথি ও ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ চিঠি জারির তিন কার্যদিবসের মধ্যে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।

প্রাসঙ্গিক নথিগুলোর মধ্যে আছে—আইপিওর সময় ব্যাংকের দায়ের বিস্তারিত তথ্য, তারিখ অনুযায়ী পরবর্তীতে নেওয়া ব্যবস্থার তথ্য এবং আইপিও তহবিল ব্যবহারের তথ্য।

ওয়ান ব্যাংকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইস-সিএসই) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাট্টালি টেক্সটাইল পুঁজিবাজারে ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ হিসাব বছরে ব্যবসা হয়েছে ৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৬ কোটি ১ লাখ টাকা। কিন্তু, কাট্টালি টেক্সটাইল ওই হিসাব বছরে মুনাফা করা সত্বেও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কোনো টাকা পরিশোধ করেনি এবং ঋণের অতিরিক্ত দায়ও সমন্বয় করেনি। এতে কোম্পানিটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হতে যাচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটি ইতোমধ্যেই কোম্পানিকে অবিলম্বে সম্পূর্ণ অতিরিক্ত দায় সমন্বয় করার জন্য জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ঋণের বকেয়া পুনরুদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করার জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও কোম্পানিটিকে জানানো হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটির কাছে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যার মেয়াদ আগামী বছরের এপ্রিলে শেষ হবে। যদি ঋণটি পুনঃতফসিল করা হয়, তাহলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

ব্যাংকটি আরও জানিয়েছে, চট্টগ্রামের পাহাড়তলির উত্তর কাট্টালিতে কোম্পানিটির ১৪ ডেসিমেল জমির একটি অংশ ওয়ান ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা বেআইনিভাবে ঋণ নিয়েছেন কাট্টালি টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী এবং চেয়ারম্যান নাসরিন হক। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় কোম্পানির বন্ধকি জমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেয় ওয়ান ব্যাংক। সে সময় কোম্পানিটি মোট ঋণের মধ্যে শুধু ১ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু, এর পর কোম্পানিটি আর কোনো টাকা দেয়নি। তাই, ব্যাংকের আমানতকারী ও কোম্পানির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এটি একটি জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামরা করছি এবং বকেয়া ঋণ সমন্বয় করার জন্য কাট্টালি টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে কাট্টালি টেক্সটাইল সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়, চলতি বছরের ২৭ জুলাই ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু, কোম্পানিটির ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ এখনো অনেক বিনিয়োগকারী পাননি বলে বিএসইসিতে অভিযোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা এবং নথি চেয়েছে কমিশন।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে ২০১৮ সালের তালিকাভুক্ত হয় কাট্টালি টেক্সটাইল। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ১১৬ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৬৩ লাখ ৫ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৩০.৩২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩.০৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.২১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৬.৪১ শতাংশ শেয়ার আছে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) কাট্টালি টেক্সটাইলে শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৩.৭০ টাকায়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...