ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

শরৎ বাবুর ‘পার্বতী’ রূপে যেমন তিনি সফল, তেমনি রবি ঠাকুরের ‘বিনোদিনী’ হয়েও। প্রোভোকডের ‘কিরণজিতে’র পর সম্রাট আকবরের প্রেয়সী ‘যোধা’ হয়ে নিজেকে করেছেন পরীক্ষিত। তার নামেই প্রকাশ পায় রূপ-গুণের মহিমা। হ্যাঁ, বলছিলাম— ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সুন্দরী ও জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে নিয়ে। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন।

ঐশ্বরিয়া রাইয়ের জন্ম ১৯৭৩ সালের ১ নভেম্বর। ভারতের কর্ণাটকের কৃষ্ণরাজ ও বৃন্দা রায় দম্পতির কোল আলো করে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা হয় ঐশ্বরিয়া এবং পদবী হিসেবে নামের শেষে যুক্ত হয় রাই। পরিবারের দ্বিতীয় এবং কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে তিনি ছিলেন সকলের আদরের।

ছোটবেলায় ঐশ্বরিয়ার বাবা-মা চলে আসেন মুম্বাই শহরে। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী ছিলেন সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী। বিশেষ করে গণিতে তার পান্ডিত্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে স্থপতি হবেন। সেই লক্ষ্যেই আগাচ্ছিলেন সামনের দিকে। কিন্তু কলেজের গণ্ডি পেরোনোর সৌভাগ্য তার হয়নি। স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে রচনা সংসদ একাডেমি অফ আর্কিটেকচারে ভর্তি হলেও মডেলিং এর জন্য পড়াশোনার ইতি টানেন।

১৯৯৩ সালে আমির খানের সঙ্গে পেপসির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লাইমলাইটে আসেন। ঐশ্বরিয়ার সিনেমা ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯৭ সালে মণিরত্নমের তামিল ছবি ‘ইরুভার’ এর মধ্য দিয়ে।

বলিউডে তার প্রথম ছবি ‘অউর পেয়ার হো গ্যায়া’। তবে পরিচিতি আসে সঞ্জয়লীলা বানসালির সাড়া জাগানো ছবি ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ দিয়ে। এই ছবিতে তিনি দর্শকদের বিমোহিত করেন, একই বছর মুক্তি পাওয়া ‘তাল’ ছবিটি তার জয়রথকে আরও এগিয়ে দেয়। যশরাজ ফিল্মসের ‘মোহাব্বাতে’তে স্বল্প উপস্থিতিতেও নজর কাড়েন। এরপর আবার বড় সাফল্য আসে বানসালির ‘দেবদাস’ দিয়েই। এই ছবিতে পার্বতী রূপে এককথায় তিনি অনন্য।

এর ঠিক পরের বছরেই ঋতুপর্ণ ঘোষের হাত ধরে আসেন বাংলা ছবির জগতে। রবি ঠাকুরের ‘চোখের বালি’র বিনোদিনী হয়ে দর্শক থেকে সমালোচক সবার মন জয় করেন। নিজের প্রতিভা মেলে ধরেন ‘রেইনকোট’, ‘জোশ’ থেকে ‘কুছ না কাহো’, ‘খাকি’ পর্যন্ত।

২০০৬ সালে জনপ্রিয় সিরিজ ‘ধুম’- এ আসেন একেবারে ভিন্নরূপে। পরের বছর মুগ্ধতা ছড়ান ‘গুরু’ দিয়ে। ‘গুজারিশ’-এর মাধ্যমে আবার তিনি বানসালির চিত্রপটে, দর্শকপ্রিয়তা না পেলেও প্রশংসিত হয় তার অভিনয়।

অভিনয় করেন ‘সরকার রাজ’, ‘অ্যাকশন রিপ্লে’, ‘রাবণ’ ছবিতে। জনপ্রিয় ছবি ‘ব্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ ছবির মাধ্যমে হলিউডের জগতে পা রাখেন। এরপর ‘প্রোভোকড’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। তবে হলিউডের ছবিতে নিয়মিত হতে গিয়ে বলিউডে খানিকটা অমনোযোগী হয়ে পড়েন অ্যাশ।

বেশ কয়েক বছর বিরতি দিয়ে ‘জাজবা’ দিয়ে আবার ফিরেন পর্দায়। ‘সর্বজিৎ’ ছবিতে প্রশংসিত হলেও ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ অভিনয় করে সমালোচিত হন। সবর্শেষ ‘ফ্যানি খান’ও দর্শকদের হতাশ করেছে। চলতি বছর প্রিয় পরিচালক মণিরত্নমের ‘পোন্নিয়্যান সেলভান’ দিয়ে আবারও বড় পর্দায় রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটে সাবেক এই বিশ্বসুন্দরীর।

অভিনয় দিয়ে তিনি আপামর জনসাধারণের মন জয় করেছেন, ঘরে তুলেছেন সম্মানজনক সব পুরস্কার। ১৯৯৯ এবং ২০০২ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ এবং ‘দেবদাস’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে ‘সেরা অভিনেত্রী’র পুরস্কার। ‘মোহাব্বতে’ সিনেমার জন্য পেয়েছেন সেরা ‘সাপোর্টিং অভিনেত্রী’র পুরস্কার।

ব্যক্তিগত জীবনে, ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল ঐশ্বরিয়া বিয়ে করেন বলিউড অভিনেতা অভিষেক বচ্চনকে। হিন্দু রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিবাহিত জীবনে পা রাখেন তারা। বিয়ের পর ঐশ্বরিয়ার নামের সঙ্গে বচ্চন যুক্ত হয়। ২০১১ সালে অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার ঘর আলো আসে একমাত্র কন্যাসন্তান আরাধ্য। বর্তমানে স্বামী-সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছেন অ্যাশ।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তার অসামান্য অভিনয় দক্ষতার কারণে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মশ্রী সম্মাননা অর্জন করেন। ২০১২ সালে অর্জন করেন ফ্রান্সের অরড্রি ডেস আর্টস অ্যাট ডেস লেট্রিস পুরস্কার।

এখানেই শেষ নয়, ২০০৪ সালে বিখ্যাত মাদাম তুসোর জাদুঘরে তার প্রতিমূর্তি স্থাপন করা হয়। নেদারল্যান্ডের কেউকেনহফ গার্ডেনে তার নামে একটি টিউলিপ ফুলের নাম রাখা হয়। ফ্রান্সেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...