সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের রাজাকার ঘোষণা দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগান লজ্জার। দুঃখ লাগে যখন শুনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও নিজেদের রাজাকার দাবি করে স্লোগান দেয়। আজ সোমবার (১৫ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছে, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা হয়েছে। তাদের অবদান ভুললে চলবে না। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানি হানাদার আর রাজাকাররা যেভাবে অত্যাচার করেছে…দুঃখ লাগে যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও নিজেদের রাজাকার দাবি করে স্লোগান দেয়। তারা কি জানে ২৫ মার্চ কি ঘটেছিলো সেখানে? ৩০০ মেয়েকে হত্যা করেছিলো, ৪০ জন মেয়েকে রেইপ করেছিলো এবং এদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলো।

তিনি আরও বলেন, অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিতো বলে তাদের কাপড় পরতে দেয়া হতো না। পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন পাশবিক অত্যাচার হতো। মিত্র বাহিনীর একজন শিখ সৈন্য মাথার পাগড়ি পেচিয়ে একজন মেয়েলে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এমন একটা ঘটনা না, এমন বহু ঘটনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না। দুর্ভাগ্য এখন মেয়েরা স্লোগান দেয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। কোন দেশে আছি, তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে, কি শিক্ষা তারা নিলো?

সরকারপ্রধান বলেন, ৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ত্যাগের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিলো। যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে সেটা কখনও হতে পারে না। বিজয়ের মর্যাদা ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য ছিলো।

সরকারি কর্মকর্তাদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইশতেহার অনুযায়ী আওয়ামী লীগ কাজ করে। সরকারি সব কাজে যেন গতিশীলতা ও জবাবদিহিতামূলক হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে দেশ।

দুর্নীতিরোধে মাঠ পর্যায়েও নজর দেয়ার তাগিদ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, এ নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। যেখানে অনিয়ম দেখবেন সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। দুর্নীতি করে কম লোক, কিন্তু বদনাম হয় বেশি। যারাই দুর্নীতিতে জড়িত তাদের প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।

চক্রান্ত করে খাদ্যের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন চক্রান্ত করে খাদ্যের দাম বাড়াতে না পারে সে দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। এছাড়া এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেদিকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে। বন্যায় অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়। কাজেই খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়।

যেসব প্রকল্পে উন্নয়ন দ্রুত হবে, জনগণ সেবা পাবে সেগুলো আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। অসমাপ্ত প্রকল্প সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তাই কৃচ্ছতা সাধন ছাড়া উপায় নেই। অপচয় রোধ করতে হবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে।

এবার আরও বেশি টাকার বাজেট দেয়ার পরিকল্পনা ছিল মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, এবারের বাজেট অবশ্যই উচ্চভিলাষী। উচ্চাভিলাষী না হলে কিভাবে উন্নত হবো? বাজেট উচ্চাভিলাষী কিন্তু বাস্তবায়নযোগ্য। পত্রপত্রিকার লেখা পড়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, নার্ভাস হবেন না। দেখবেন সত্যতা আছে কিনা। না থাকলে ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা নেই সেটা দেশের কথা চিন্তা করেই নেই। হঠাৎ করে অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতায় আসিনি। দেশের প্রতি ইঞ্চি ও মানুষকে চিনি। জানি দেশের কিভাবে ভালো হয়। কে কি লিখলো সেটা দেখতে গেলে দেশের উন্নতি করতে পারবো না। মর্যাদাবোধ ও বিবেক নিয়ে কাজ করলে প্রতিটি কাজে সফলতা আসবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *