এস আলম গ্রুপ আরও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৩ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে। যার অর্ধেক আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন– কয়লা বা গ্যাস দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এস আলম। ২০২৭ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করছে তারা।
বর্তমানে বাঁশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপটির। এটি এসএস পাওয়ার প্লান্ট নামে পরিচিত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন ১ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩ হাজার একর ভূমি প্রয়োজন। ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আরও জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির জন্য ৬০৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে এস আলমকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস আলম বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালক এসএম আলমগীর কবীর বলেন, প্রকল্প এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৫ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ ছাড়া ১ লাখেরও বেশি মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে তাদের দাবি।
গতকাল রোববার সরেজমিন বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মিত হয়েছে। এখান থেকে ৪৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। আলমগীর কবীর জানান, আগামী এপ্রিলে সাবস্টেশনের কাজ শেষ হলে পুরো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কয়লা ঢেকে দেওয়া বেল্টে জেটি থেকে কোল ইয়ার্ডে নেওয়া হচ্ছে। তবে কোল ইয়ার্ডের দুই-তৃতীয়াংশ উন্মুক্ত রয়েছে। আলমগীর কবীর জানান, ইয়ার্ডের দুপাশে ফেন্স (বেড়া) দিয়ে ঘিরে রাখা আছে। কয়লা খোলা থাকলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমে ৷
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশ পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনা করেছে কর্তৃপক্ষ। এসএস পাওয়ারের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা এবাদত হোসেন ভূঁইয়া জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার অর্থাৎ ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। প্রকল্পটিতে এস আলম গ্রুপের মালিকানা ৭০ শতাংশ এবং বাকি ৩০ শতাংশের রয়েছে চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজির।
গত বছর এ কেন্দ্রটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ইউনিট এবং ২৬ অক্টোবর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তাদের বিদ্যুৎ কেনা বাবদ কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ পর্যন্ত আড়াই হাজার কোটি টাকা পাবে এসএস পাওয়ার।
বর্তমানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রায় ১২ টাকা পড়ছে। কয়লা আনা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। প্রতিদিন পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে ১২ হাজার টন কয়লা লাগে। জেটিতে ৬ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারে।