এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘নতুন মাইলফলক’ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, যানজট নিরসনে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আজ ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন কিছুক্ষণ আগেই আমি করেছি। এটা আপনাদের উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প (কাওলা-ফার্মগেট) অংশের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠানস্থলে তাদের স্বাগত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এক্সপ্রেসওয়ে বিশেষ করে এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্বরোড, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার, কমলাপুর এলাকার যানজট নিরসন করবে। এর ফলে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে, কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না, মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের যে একটি আকাঙ্ক্ষা, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে তা পূরণ হবে। আমরা আজ যতদূর পর্যন্ত (সম্ভব) করলাম, পরবর্তী সময়ে বাকিটাও হয়ে যাবে।’
এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফলক উন্মোচন করেন। পরে কাওলা থেকে প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পার হন প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা প্রান্ত থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সফর করেন তিনি। ১৬ মিনিট পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট প্রান্তে নামেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর পুরনো বাণিজ্য মেলার সুধী সমাবেশস্থলে হাজির হন তিনি।
পরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সুধী সমাবেশস্থলেও প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে বোন শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নুর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান উপস্থিত ছিলেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা হাফেজ মুহিবুল্লাহিল বাকী মোনাজাত পরিচালনা করেন।
সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন এতে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
আগামীকাল (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওতে যানচলাচল শুরু হবে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটে যাতায়াত করা যাবে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দূরত্বের এই এক্সপ্রেসওয়ের আপাতত প্রথম অংশ কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যান চলাচল করবে।
‘সাপোর্ট টু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্পসহ সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে উড়াল মহাসড়ক নির্মাণে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে থেকে রেললাইনের ওপর এবং পাশ দিয়ে বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, কমলাপুর হয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এতে গাড়ি ওঠানামায় থাকছে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এ অংশের ১৫টি র্যাম্পের ১৩টি খুলছে, যার দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার।
এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ৩ চাকার যান ও বাইসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। অন্যান্য যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।