নভেম্বর ২১, ২০২৪

বিভীষিকাময় এক সফর শেষে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ অবশেষে দেশে ফিরেছে। সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাস পর জাহাজটি সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় নোঙর করেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। এই জাহাজেই দেশে ফিরেছেন জিম্মিদশা থেকে মুক্ত ২৩ বাংলাদেশি নাবিক।

সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকে ফিরতি পথে নিয়ে এসেছে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর।

এদিকে অনিশ্চিত এক অবস্থা কাটিয়ে দেশে ফিরতে পেরে নাবিকরা উচ্ছ্বসিত। তারা জানিয়েছেন, সবার মাঝে বিরাজ করছে ঈদের আনন্দ। পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন, এই খুশিতে তাদের অনেকেই আত্মহারা।

এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়ায় নোঙর করার খবরে জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের পরিবারেও বইছে খুশির বন্যা। এখন তারা স্বজনদের কাছে পেতে শেষ মুহূর্তের অপেক্ষায় আছেন। আজ তারা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফিরবেন নিজ নিজ বাসায়।

এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়ায় নোঙর করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন এর মালিক-প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন। জাহাজটি কুতুবদিয়ায় লাইটারেজের মাধ্যমে কিছু পণ্য খালাস করবে। কিছুটা হালকা করে ড্রাফট কমিয়ে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি এনে বহির্নোঙরে বাকি পণ্য খালাস করা হবে। এরপর মঙ্গলবার বিকালে ছোট আকারের একটি জাহাজে করে নাবিকদের নিয়ে আসা হতে পারে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে। আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল তাদেরকে নগরীর সদরঘাটস্থ কেএসআরএম জেটিতে নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। নাবিকদের হয়তো বন্দরের কোনো একটি জেটিতে নেওয়া হবে। সেখান থেকে যার যার বাড়িতে চলে যাবেন নাবিকরা। তাদের স্থলে নতুন একদল নাবিক জাহাজ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

কুতুবদিয়ায় নোঙর করার পর জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশীদ এক অডিও বার্তায় বলেন, আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টায় আমরা কুতুবদিয়ার উপকূলে নোঙর করেছি। জাহাজের সব অফিসার ক্রু সুস্থ আছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের কার্গো নামানোর (চুনা পাথর খালাস) কাজ শুরু হবে।

জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ জাহাজ থেকে হোয়াটস অ্যাপে যুগান্তরকে বলেন, দেশে ফিরতে পারার আনন্দ যে কতটুকু তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জলদস্যুদের হাতে ভারী অস্ত্রের মুখে জিম্মি থাকার সময় ভাবতেও পারিনি কখনো আর দেশে ফিরতে পারব। তাই আজকের মুহূর্তটাকে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান বিকাল সাড়ে ৫টায় তার ফেসবুকে জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে নিজের একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি পোস্ট করেন। এতে তিনি লিখেছেন, ভালোবাসি বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।

এদিকে সোমবার এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়ায় বহির্নোঙরে এসে পৌঁছানোর পরপরই নাবিক পরিবারগুলোর দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে। নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ছেলে অবশেষে ঘরে ফিরতে পারছে, এর চেয়ে বড় সুখবর আর নেই। আমরা সবাই খুশি। এই খুশির মাত্রা বলে বোঝানো যাবে না।

কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে ১২ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়েছিল। ৩২ দিন পর ১৩ এপ্রিল জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে মুক্তি দেয় দস্যুরা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...