ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় ১০ আসামির ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশকে সরবরাহ করবে।

সোমবার (৩ জুন) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসসামস জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান আসামিদের এনআইডি ও পাসপোর্টে কয়টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে তা জানার জন্য আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার তিনজন হলেন- সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। এছাড়া তদন্তে প্রাপ্ত সন্দেহভাজন পলাতক আসামিরা হলেন- আক্তারুজ্জামান শাহীন, মো. সিয়াম হোসেন, ফয়সাল আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, চেলসি চেরী, তাজ মোহাম্মদ খান হাজী এবং মো. জামাল হোসেন।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান আদালতে আবেদনে বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মামলার ভিকটিম ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে কলকাতা নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে ও গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামিরা ভিকটিমকে কলকাতার নিউটাউন এলাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং প্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশে মৃতদেহের হাড় ও মাংস আলাদা করে মাংসপিণ্ড টয়লেটের কমোডে ফেলে দেয় এবং হাড়গুলো গারবেজ ও পলিতে ভরে ট্রলি ব্যাগে করে আশপাশের বর্জ্য খালে ফেলে দেয়।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল। তারা পরিকল্পনা করে যে, এ মামলার ভিকটিমকে কীভাবে অপহরণ ও টাকা-পয়সা আদায় করবে এবং টাকা-পয়সা নেওয়ার পর কীভাবে হত্যা তথা মরদেহ গুম করবে তার লোমহর্ষক বর্ণনা গ্রেফতার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ তথা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলমান আছে।

এ অবস্থায় মামলার মূল রহস্য উৎঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতার তিন আসামি ও তদন্তে পাওয়া সন্দেহভাজন সাত আসামির এনআইডি ও পাসপোর্ট নম্বরের বিপরীতে কোন ব্যাংকে কয়টি অ্যাকাউন্ট আছে তার তথ্য সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের হেড অব বাংলাদেশ এফআইইউয়ের কাছে আদেশ পাঠানো প্রয়োজন। পরে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

এ ঘটনায় ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...