এখন থেকে কাউকে কোন ঋণ দিতে পারবেন না ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকেরা (ব্রাঞ্চ ম্যানেজার)। এমনকি বিভাগীয় ও জোন প্রধানরাও কোনো ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন না। এছাড়া ঋণের সীমাও বাড়াতে পারবেন না তাঁরা। তবে কৃষি খাতে ঋণ দেয়ার ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে।
গত ১৯শে জুন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভাতেই পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন আহসানুল আলম। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে।
জানা গেছে, আগে সবক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপক ও জোন প্রধানেরা পদক্রম ভেদে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারতেন, যার বড় অংশই যেত গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে এসেছে। এখন সব ঋণ দেয়া হবে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনে। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নেওয়ার পর ব্যাংকটির একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ।
নিয়ন্ত্রণ একচেটিয়া করার জন্য ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৭ ব্যাংক থেকে বিদেশে টাকা পাচারের তথ্য নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। মহামান্য আদালত তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঋণ অনুমোদনসংক্রান্ত পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০ জুলাই শাখা পর্যায়ে চিঠি দেন ব্যাংকটির এমডি মোহাম্মদ মুনিরুল মওলা ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী। নানা অনিয়মের কারণে তারল্যসংকটে পড়ার পর বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।
আগে জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা শাখা ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত থাকলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারতেন। এর ওপরের পদের ব্যবস্থাপকদের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা ছিল। আর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান বা জোনাল প্রধানদের ঋণ অনুমোদনের সীমা ছিল ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সারা দেশে ইসলামী ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৩৯৪টি। প্রতিটি শাখার অধীনে আছে একাধিক উপশাখা।
ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতাসংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের নতুন ঋণ বা ঋণের সীমা বৃদ্ধির অনুমোদন করবেন এমডি। ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ বা ঋণের সীমা বৃদ্ধির অনুমোদন দেবে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি। তবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের ক্ষেত্রে আগের ক্ষমতাই শাখা ব্যবস্থাপকদের হাতে বহাল থাকবে।
আর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নের আওতায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন এমডি। এর বেশি হলে তা নির্বাহী কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদে যাবে। ফলে শাখা পর্যায় থেকে কৃষিঋণ ছাড়া অন্য কোনো ঋণ অনুমোদন দেওয়া যাবে না। তবে কৃষিঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা তুলে না নিলেও তা বন্ধ রয়েছে বলে জানান ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা।