চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ঋণের সুদের হারের সীমা। এতে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ঋণের বিপরীতে সুদের হার বেড়েছে। কিন্তু আমানতে সুদের হার বাড়ায়নি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে ঋণ এবং আমানতের সুদের হারের পার্থক্য দিন দিন বাড়ছে।
গত সেপ্টেম্বরে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড বেড়ে ২৬ মাসে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। এই সময় স্প্রেড ছিল ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। এর বিপরীতে ঋণ বিতরণ করেছে গড়ে ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ সুদে। এতে করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
আর গত জুলাইয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও আমানতের ব্যবধান ছিল শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। ওই মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে আমানত নিয়ে ঋণ বিতরণ করেছে গড়ে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ সুদে। অর্থাৎ প্রতি মাসেই আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়ছে। যার কারণে ঋণ ও আমানতের ব্যবধানও বাড়ছে।
গত সেপ্টেম্বরে ঋণ ও আমনতের যে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে, তা গত ২৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ঋণ ও আমানতের ব্যবধান ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ষ্প্রেডে ঋণ বিতরণ করতে পারে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত ও ঋণের ব্যবধান বা স্প্রেড ছিল বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির স্প্রেড ছিলো ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এই সময় প্রতিষ্ঠানটি আমানতে ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ সুদ দিলেও ঋণে বিতরণ করেছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ছিলো রেকর্ড ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ওই বছরের শেষে তা কমে দাড়ায় ২ দশমিক ৮১ শতাংশে। আর ২০২২ সালের জুনে এই স্প্রেড কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এরপর ২০২২ সালের শেষ দিকে দেশের ব্যাংক খাতে বড় ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ পেলে মানুষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে নেওয়া শুরু করে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণে সুদের হার বাড়ায়। ওই বছর ডিসেম্বর শেষে স্প্রেড কমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে চলতি বছরের জুলাই মাসে স্প্রেড সর্বনিন্ম শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশে নেমে আসে। তবে পরের মাস আগস্টেই বড় পরিবর্তন আসে ঋণ ও আমানতের সুদের হারের পার্থক্যে। এই মাসে হঠাৎ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এদিকে গত জুলাই থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার পর প্রতি মাসেই সুদহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত জুলাইয়ে মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল (স্মার্ট) সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, সেপ্টেম্বরেও অপরিবর্তিত ছিল। তবে অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশে এবং নভেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে । যার ফলে নভেম্বরে কেউ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে তাকে ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশে ঋণ নিতে হবে।