যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পশ্চিম তীরের চরমপন্থী ও দাঙ্গার উসকানিদাতা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায় কানাডা। দেশটির প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
শুক্রবার কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ওয়াটারলু শহরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘কানাডা পশ্চিম তীর অঞ্চলে সহিংসতার অবসান চায়। এজন্য এ পদক্ষেপটি আমাদের বিবেচনাধীনে রয়েছে।’
জর্ডান নদীর পশ্চিমাংশের ৫ হাজার ৬৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভূখণ্ডটি ‘পশ্চিম তীর’ নামে পরিচিত। নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে গত ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ যে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন, সেই রাষ্ট্রের রূপরেখার মূল অংশে রয়েছে এই ভূখণ্ডটি।
মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ১৯৬৭ সালে পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল এবং সেখানকার বিভিন্ন শহর-গ্রামে ইহুদি বসতিস্থাপনকারীদের পাঠানো শুরু করে। বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্র ইসরায়েলের এ পদক্ষেপকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। তবে ইসরালের বক্তব্য, এ অঞ্চলের সঙ্গে ইহুদিদের ধর্মীয় সংযোগ রয়েছে।
পশ্চিম তীরের শহর-গ্রামগুলোতে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিবাদ-অস্থিরতা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। তবে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার ১৮ মাস আগে থেকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ও ইহুদি বসতকারীদের মধ্যে অস্থিরতার মাত্রা বাড়ছিল। হামাসের হামলার পর তাতে রীতিমতো উল্লম্ফণ ঘটে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবরের পর গত প্রায় চার মাসে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি দাঙ্গায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৭০ জন ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বসতি স্থাপনকারীরা এসব হত্যার জন্য দায়ী।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার পশ্চিম তীরের চার বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার আদেশে স্বাক্ষরের আগে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উদ্দেশে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই চিঠিতে বাইডেন বলেন, ‘পশ্চিম তীরে দাঙ্গা পরিস্থিতি চলছে। গোঁড়া ও চরমপন্থীদের লাগামহীন সহিংসতা, বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড ও লুটপাটের কারণে ইতোমধ্যে শত শত বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে, বিপুল সংখ্যক মানুষ ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, সরকারি-বেসকরকারি-ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই অসহনীয় অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিষেধাজ্ঞা আদেশে স্বাক্ষর করার কয়েক ঘণ্টা পর ওয়াটারলুতে সংবাদ সম্মেলন করেন ট্রুডো। সেখানে পরোক্ষভাবে বাইডেনকে সমর্থন করেন তিনি।
‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান এখন সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। আমরা এমন কোনো তৎপরতা সেখানে চলতে দিতে পারি না, যা পশ্চিম তীরের শান্তি-স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে বাধা সৃষ্টি করবে,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেন ট্রুডো।
সূত্র : রয়টার্স