ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে যানজট নিরসনে খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুরের পুবাইলে মীরের বাজারের অংশটি নির্ধারিত সময়ের আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে। এই অংশ খুলে দেওয়ায় আধঘণ্টার পথ পার হতে এখন লাগছে মাত্র এক মিনিট।

ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপের সহায়তায়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ভিত্তিতে নেওয়া দেশের প্রথম সড়ক প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে এই এক্সপ্রেস ওয়ে। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সঙ্গে সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপের পাশাপাশি দেশের দুটি প্রতিষ্ঠান শামিম এন্টারপ্রাইজ ও ইউডিসি কন্সট্রাকশনও অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মীরের বাজারের মধ্য দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন। ফলে রেল ক্রসিংয়ে কারণে ঘনবহুল এই এলাকা প্রতিদিন তীব্র যানজট হয়। ঈদ কিংবা কোনো উৎসবকে সামনে রেখে এই যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে এবার ওই ক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস ওয়ে অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি দিয়ে নিয়ে এসেছে স্বস্তি।

সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস ওয়ে) পিপিপি প্রকল্প ব্যবস্থাপনক ইয়াং জিয়ান জানান, এই অংশের এক্সপ্রেস ওয়ে খোলায় আধঘণ্টার পথ পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে মাত্র এক মিনিটে।

তিনি আরও জানান, যান চলাচলের জন্য সদ্য খুলে দেওয়া এক্সপ্রেস ওয়ের সেতুটি প্রকল্পের দীর্ঘতম সেতু। এর মোট দৈর্ঘ্য ৫৬০.২৬ মিটার ও ২০.৬ প্রস্থ মিটার। এই এক্সপ্রেস ওয়ের ১৫তম স্প্যানটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ওপর দিয়ে গেছে। দেশের ৩০ ট্রেন গুরুত্‌পূর্ণ এই রেলপথ দিয়ে চলাচল করে বলেও জানান তিনি।

ইয়াং জিয়ান আরও বলেন, এই প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, ঈদের আগে এক্সপ্রেস ওয়ের গুরত্বপূর্ণ এই অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী হিসেবে উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস ওয়ে পুরোপুরি খুলে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

হির্বিশ্বের আদলে আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত এই এক্সপ্রেস ওয়ের অভিনবত্বের কথা উল্লেখ করে প্রকল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিয়াও ঝিমিং বলেন, প্রকল্পটিতে চীনের সড়ক নির্মাণ প্রযুক্তির মান প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্মাণের গুণমান এবং প্রযুক্তিগত কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি অনন্য সড়ক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্মাণের সময় খরচ কমানো, শক্তি সাশ্রয়, নির্গমন হ্রাস এবং পরিবেশগত সুরক্ষা বিষয়গুলোও মাথায় রাখা হয়েছে।

ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের কল্যাণে গতি পাবে অর্থনীতি
ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস ওয়ের কারণে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। এতে বাঁচবে মূল্যবান সময়। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখবে এক্সপ্রেসওয়েটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানতম সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যানজটের কারণে এই কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়া। এই মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়ায় চাপ পড়ে অর্থনীতির ওপর।

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। অন্য একটি হিসাবে শুধু মাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ২৭৪ কোটি টাকা। অবশ্য এটি পুরনো হিসাব। বর্তমান হিসাবে এর পরিমান তিনশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

২০১৫ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আর যাতায়াতে সময় অপচয়ের কারণে যাত্রীদের ক্ষতি ১ হাজার কোটি টাকা। দুর্ঘটনা ও ভাঙা সড়কের কারণে যানবাহনের ক্ষতি ৫৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া যানজটে জ্বালানী অপচয় হয় ২ হাজার কোটি টাকা, পরিবেশগত ক্ষতি ১ হাজার কোটি, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ৩০০ কোটি ও অন্যান্য ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতি ৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। অবশ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল কিংবা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কম।

তবে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক পথে যান চলাচলে গতি আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস। এ ব্যাপারে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস ওয়ে কোম্পনি লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. শফিকুল ইসলাম আনন্দ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের গুরুত্‌পূর্ণ একটি সড়ক। প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন। এই এক্সপ্রেস ওয়ে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে সড়কপথে যোগাযোগ আরো সহজ করে দিয়েছে।

২০১৮ সালের চুক্তির আওতায় পিপিপির অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে ২০২১ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মেগা এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে আনা হয়েছে পৃথিবীর সেবা প্রযুক্তি। এতে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রতিভাবান প্রকৌশলীরা। মূলত রাজধানীতে গাড়ির চাপ কমাতে ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করতেই গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই এক্সপ্রেসওয়ে। গাজীপুরের বাইপাস থেকে কাঞ্চনব্রিজ হয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর দিয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হচ্ছে এটি। ৪৮ কিলোমিটারের পথে দুপাশে সার্ভিস লেনসহ তৈরি হচ্ছে ৬টি লেন। এই এক্সপ্রেস ওয়ের মাঝখানে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির টোল সড়ক। এই ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস ওয়ের সুবিধা যখন সবাই পুরোপুরি পাবেন তখনই দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখা সংযুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...