জুলাই ১, ২০২৪

গাজায় বর্বরতা চালানোর জেরে হামাসের পর এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে লেবাননের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র দল হিজবুল্লাহ। এমন পরিস্থিতিতে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরু হলে সংগঠনটির পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ইরান সমর্থিত অন্যান্য দেশের সশস্ত্র সংগঠনগুলো। তবে সমমনা ওই সব সংগঠনকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজেদের এক লাখ যোদ্ধা নিয়েই আপাতত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান সাঈদ নাসরাল্লাহ।

অন্যদিকে, সংগঠনটির এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিদেশি যোদ্ধারা যোগ দিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী হবে যুদ্ধ। খবর এপির।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানায় হিজবুল্লাহ। এর পর থেকে উত্তর ইসরায়েল ও দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই দু’পক্ষের গুলি বিনিময় হচ্ছে।

এর আগে ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ায় ১৩ বছরের সংঘাতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে লেবানন, ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সেই ধারাবাহিকতায় এসব সংগঠনের নেতা বলছেন, তারা এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও যৌথভাবে লড়তে চান।

হিজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ গত বুধবার এক বক্তৃতায় বলেন, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও অন্যান্য দেশের সমমনা নেতারা এর আগে হিজবুল্লাহকে সহায়তা করার জন্য হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।

নাসরাল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমাদের কাছে যে এক লাখ যোদ্ধা রয়েছেন, তাতেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করছি।’

নাসরাল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে হিজবুল্লাহর জনশক্তির একটি অংশই শুধু ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা মূলত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপকারী বিশেষ যোদ্ধা। তবে সর্বাত্মক যুদ্ধের ক্ষেত্রে তা পরিবর্তন হতে পারে।’

নাসরাল্লাহ ২০১৭ সালে এক বক্তৃতায় সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘ইরান, ইরাক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের যোদ্ধারা এই ধরনের যুদ্ধের ‘অংশীদার’ হবেন।’

ইরান সমর্থিত লেবানিজ ও ইরাকি গোষ্ঠীর কর্মকর্তারা বলছেন, লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হলে আশপাশের অঞ্চল থেকে যোদ্ধারা যোগ দেবেন। এমন হাজার হাজার যোদ্ধা ইতোমধ্যেই সিরিয়ায় মোতায়েন রয়েছেন। তারা সহজেই গোপনে সীমান্ত দিয়ে লেবাননে পৌঁছে যেতে পারেন।

ইরাকে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে আমরা হিজবুল্লাহর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব।’

অবশ্য হিজবুল্লাহর বিশেষজ্ঞ কাসিম কাসির বলেন, বর্তমানের যুদ্ধের বড় অংশই উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর, যেমন– ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা। আর এর জন্য বিপুল সংখ্যক যোদ্ধার প্রয়োজন নেই। তবে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরু হলে এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে চললে হিজবুল্লাহকে লেবাননের বাইরে থেকে সমর্থনের প্রয়োজন হতে পারে।

লেবাননে অন্য দেশ থেকে যোদ্ধা আসতে পারে, সে ব্যাপারে ইসরায়েলও সতর্ক রয়েছে। হিজবুল্লাহর ডেপুটি লিডার নাইম কাসেম গত সপ্তাহে বলেন, এই যুদ্ধ ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে। যদি বিদেশি যোদ্ধা যোগ দেয়, তাহলে তা হবে ইতিবাচক।

এর আগে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সর্বশেষ বড় আকারের সংঘাত হয়েছিল ২০০৬ সালে। তখন ইসরায়েলকে নাজেহাল বানিয়ে ছাড়ে হিজবুল্লাহ।

এদিকে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থাপনা চিহ্নিত করে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে হিজবুল্লাহ। এতে নেগেভ মরুভূমিতে ইসরায়েলের দিমোনা পরমাণু চুল্লি, তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর এবং নেভাতিম বিমানঘাঁটিসহ বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে।

ইসরায়েলি বন্দর ব্যবহারকারী জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুতির

অন্যদিকে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বন্দর ব্যবহার করায় একটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে তারা। লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী বাল্ক ক্যারিয়ারটিতে আরব সাগরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা আঘাত করা হয়।

 

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *