বহুল আলোচিত দুই মামলায় ২৪ বছর দণ্ডিত হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা ইমরান খান। দুটি মামলার একটিতে তার সঙ্গে দণ্ডিত হয়েছেন ইমরানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা কুরেশি ও অপরটিতে স্ত্রী বুশরা বিবি।
বুধবার রাষ্ট্রীয় উপহার বেআইনিভাবে বিক্রির মামলায় পাকিস্তানের ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ইসলামাবাদের একটি দুর্নীতি বিরোধী আদালত।
রায়ে ইমরান ও বুশরাকে ১০ বছরের জন্য সরকারি পদে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনের প্রত্যেককে ৭৮৭ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি জরিমানা করা হয়েছে।
এই দণ্ডাদেশের একদিন আগেই ইমরানকে আরেকটি মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি প্রকাশের অভিযোগে। পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে পিটিআই নেতাকে দুই মামলায় ২৪ বছর দণ্ড দেওয়া হলো।
এখন প্রশ্ন হলো- ইমরান খান কতদিন জেল খাটবেন- ১০ বছর না ১৪ বছর? পাকিস্তানের কয়েকজন আইনজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে জিয়ো নিউজ।
একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিসহ আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইমরান খানের সাজা সামগ্রিক শাস্তির পরিবর্তে একসঙ্গে হবে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কারাদণ্ডের সাজা একসঙ্গে হবে না আলাদা হবে তা বিচারককে তার সিদ্ধান্তে জানাতে হবে।
একসঙ্গে বা যুগপৎ কারাবাস হলো এমন শাস্তি যা একইসঙ্গে ভোগ করা হয়। আর অন্যটি হলো পূর্ববর্তীটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরেকটির মেয়াদ শুরু হয় না।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ওয়াজিহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাজা যুগপৎ হবে নাকি ক্রমবর্ধমান হবে তা আদালতকে তাদের রায়ে স্পষ্ট করতে হবে।
তিনি বলেন, আদালত যদি এই মামলায় ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে, তাহলে ইমরান খানকে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাগারে কাটাতে হবে।
এই দুটি মামলায় ইমরান খান কত তাড়াতাড়ি জামিন পেতে পারেন এ বিষয়ে বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) ওয়াজিহ বলেন, আইনগতভাবে যেহেতু দেশে নির্বাচনি প্রক্রিয়া চলছে এবং কোনো জাতীয় নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তবে তার মামলা সম্পর্কিত আপিলের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, হয় পুরো মামলাটি তাড়াতাড়ি শুনানি করা উচিত বা কমপক্ষে সাজা স্থগিত করা উচিত। এসব মামলায় বিচার বিভাগের আচরণ দুঃখজনক, আমরা অ্যাভেনফিল্ড মামলায় অশালীন তাড়াহুড়ো দেখেছি এবং ইমরান খানের ক্ষেত্রেও একই তাড়াহুড়ো দৃশ্যমান।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সিনেটর কামরান মুর্তজা বলেন, একাধিক সাজা হলে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে স্পষ্ট করে দেন যে সাজা একসঙ্গে নাকি আলাদা হবে।
তিনি বলেন, সাধারণত আইনে বলা আছে, পেশাদার অপরাধী বা মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী না থাকলে আদালত একসঙ্গে সাজা ঘোষণা করে। ইমরান খানের ক্ষেত্রে এটি হবে যুগপৎ সাজা এবং তাকে কেবল সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাজা যুগপৎ হবে নাকি সমষ্টিগত হবে তা যদি আদালত কোনো কারণে স্পষ্ট না করেন, তাহলে আইনজীবী ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ ধারায় একসঙ্গে সাজা নির্ধারণের জন্য আবেদন করতে পারেন।