নভেম্বর ১৪, ২০২৪

পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাত্র কিছুদিন আগেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বেশ বেকায়দাতেই ছিল।

যখন ইমরান খানকে একের পর এক মামলায় কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হচ্ছিলো, তখন তার দল সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বাধীনভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে বেগ পেতে হচ্ছিলো।

এমন অবস্থায়, পাকিস্তানে গত আটই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন যে, পিটিআই ‘সমর্থিত’ প্রার্থীরা হয়তো মাত্র কয়েকটি আসনে জয় পাবে। তবে এই ধারণা শিগগিরই পাল্টাতে শুরু করে।

নির্বাচনের কয়েক দিন চূড়ান্ত ফল আসার পর এখন পুরো দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ইমরান খান এবং তার দলের সমর্থিত প্রার্থীরা বহু আসনে জয় পেয়ে ফেডারেল এবং প্রাদেশিক পরিষদে যেতে পুরোপুরি তৈরি।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিকট ভবিষ্যতে ইমরান খানের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আইন বিশেষজ্ঞ হাফিজ আহসান খোখার মনে করেন, মুক্তি পেতে হলে ইমরান খানকে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

আদালত বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে সাজা দিয়েছে। এসব সাজা স্থগিত বা বাতিল করতে হলে তাদেরকে আদালতে যেতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি তাদেরকে হয়তো রাজনৈতিকভাবে কিছুটা সুবিধা দেবে, তবে আদালতে এটি তাদের তেমন কোনো কাজে আসবে না।

হাফিজ আহসান খোখারের মতে, আদালতে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে ইমরান খানকে অনেক জটিলতা মোকাবেলা করতে হবে। কারণ “অনেক মামলায় তিনি দোষ করার কথা স্বীকার করেছেন বলে মনে হচ্ছে যেমন সাইফার মামলা, তোশাখানা বা সম্পদ বিষয়ক মামলা।”

আইনজীবী হাফিজ আহসান খোখার বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাজা কমানোর ক্ষেত্রে আইনি ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তার দল কোন সরকার গঠন করছে না।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, ফেডারেল এবং প্রাদেশিক পরিষদে ইমরান খান সমর্থিত প্রার্থী থাকার মানে হচ্ছে, এই দুই জায়গাতেই ইমরান খানের পক্ষে নানাভাবে আওয়াজ তোলা হবে। এছাড়া ইমরান খানকে যেসব মামলা এবং যে প্রক্রিয়ায় সাজা দেয়া হয়েছে সে বিষয়েও ভিন্ন মত উঠে আসবে।

লাহোর ভিত্তিক একজন ব্যারিস্টার এবং সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ইমরান খানের সাজা বাতিল করে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার দুটি উপায় রয়েছে।

একটি হচ্ছে, তার দলকে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে হবে, তাকে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে, তিনি তখন প্রেসিডেন্টকে বলে তার সাজা বাতিল বা কমিয়ে আনতে পারেন।

এই পদ্ধতিতে তিনি হয়তো বের হয়ে আসতে পারবেন কিন্তু তিনি খালাস পেয়েছেন বলা যাবে না। কারণ এই পদ্ধতিতে তিনি আইনগত বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মাধ্যমে খালাস পাচ্ছেন না।

তার মতে আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে যে, তার দল সরকার গঠন করলে যেসব প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করছে তারা যদি সেগুলো তুলে নেয় তাহলে তিনি বের হয়ে আসতে পারবেন। এর আগেও বেশ কয়েক বার রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে আমরা এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি।

আইনজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞ আসাদ জামালও মনে করেন যে এটা একটা পদ্ধতি হতে পারে। কিন্তু তার মতে, মামলা যদি তুলে নেয়া নাও হয়, তারপরও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে আরো বিকল্প থাকবে।

সাজার বিরুদ্ধে তারা আপিল করতে পারবেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে সেগুলোর ভিত্তি খুব একটা মজবুত নয়। বরং অনেক অনিয়ম রয়েছে। তাই আদালত তাৎক্ষণিকভাবে সাজা স্থগিত কিংবা বাতিল করতে পারেন।

যাইহোক তিনি মনে করেন, এসব বিকল্প উপায় অবলম্বন করা তখনি সম্ভব হবে যখন পিটিআই কেন্দ্রে সরকার গঠন করবে।

কিন্তু নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলীম লীগ-পিএমএল-এন ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) একজোট হয়ে সরকার গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেটা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...