ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রা প্রদেশে হড়কা বান ও একটি আগ্নেয়গিরি থেকে নেমে আসা শীতল লাভার স্রোতে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১৭ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় দুর্যোগ সংস্থার এক কর্মকর্তা।

পশ্চিম সুমাত্রার দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার কর্মকর্তা ইলহাম ওয়াহাব এএফপিকে বলেন, গত রাত পর্যন্ত আমরা ৩৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তবে আজ সকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে।

উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এখনো ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে কাজ চলছে। নিখোঁজদের মধ্যে আগাম জেলায় তিনজন এবং তানাহ দাতারে ১৪ জন। বন্যার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দুই এলাকায় কয়েক লাখ মানুষের বসবাস।

এখন পর্যন্ত কতজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি ইলহাম ওয়াহাব। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অনুসন্ধান, উদ্ধার, সরিয়ে নেওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা এবং তল্লাশি অভিযানের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় তল্লাশি ও উদ্ধার সংস্থা জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যার মধ্যে উদ্ধার কর্মীরা আগাম জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম চাংডুয়াংয়ে ১৯টি লাশ পান। তারা প্রতিবেশী জেলা তানা দেতার থেকে আরও ৯টি লাশ উদ্ধার করেন।

শনিবার কয়েক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টির পর সুমাত্রার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মারাপি থেকে পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির ছাই ও পাথর নেমে আসে। এই কাদার স্রোতে দুটি জেলা তলিয়ে যায় এবং শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ ও সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করে ও লোকজনের মৃত্যুর কারণ হয়।

জীবিতরা জানিয়েছেন কিভাবে তারা তাদের বাড়ির দিকে ধেয়ে আসা ‘শীতল লাভা’ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ‘শীতল লাভা’ আগ্নেয়গিরির উপাদান ও নুড়ি-পাথরের একটি সংমিশ্রণ যা বৃষ্টির পানির সঙ্গে আগ্নেয় পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে আসে।

আগাম জেলার গৃহিণী রিনা দেভিনা (৪৩) বলেন, আমি বজ্রপাত ও ফুটন্ত পানির মতো শব্দ শুনতেই পাই। এগুলো ছিল মারাপি পর্বত থেকে পড়তে থাকা বড় বড় পাথরের শব্দ। এগুলো সব আলকাতরার মতো কালো ছিল, তাই আমি আমার মোবাইল ফোনকে টর্চের মতো করে ব্যবহার করি। রাস্তাগুলো সব কর্দমাক্ত ছিল। আমি বারবার খোদার নাম নিতে থাকি।

তিন সন্তানের এই মা জানান, তাদের প্রতিবেশীদের বাড়িটি বড় একটি পাথরের নিচে চাপা পড়ে গুঁড়িয়ে গেছে। এতে তার চার প্রতিবেশী মারা গেছেন।

ইন্দোনেশীয় ও তাগালোগ শব্দ ‘লাহার’-এর অনুবাদ হিসেবে ‘শীতল লাভা’ ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, শূন্য থেকে ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে ‘লাহার’ বা ‘শীতল লাভা’ গঠিত হয়, কিন্তু এগুলোর তাপমাত্রা সাধারণত ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে থাকে।

চলন্ত লাহারের স্রোত অনেকটা ‘পাতলা কংক্রিটের স্রোতের মতো’, চলার পথে অন্যান্য আবর্জনা এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে এর পরিমাণ ও আয়তন বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে।

মানুষের বিভিন্ন ধরনের তৎপরতার কারণেই অংশত বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটছে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে বন উজার ও পাহাড়-পর্বতে খোঁড়াখুঁড়ি বা ধ্বংস এবং এলোমেলো উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে এ ধরনের দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মত তাদের।

গত ছয় মাসে মারাপি পর্বতের চারপাশে একই ধরনের বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...