সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দেশটির ইংরেজি নাম ইন্ডিয়া বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে দেশটিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এ নিয়ে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল দেশটিতে। সম্প্রতি জি২০ বৈঠককে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে পাঠানো একটি নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র এই জল্পনার পালে নতুন হাওয়া দিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত যদি সরকার সত্যিই নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয় আর তা তাদের সংসদে অনুমোদন পায় তাহলে দেশটিকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে অনেক দলিল-দস্তাবেজ, বই-পুস্তক, অনলাইন বা ডিজিটাল জগতের অনেক কিছু। আর এ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি রুপি ব্যয় হতে পারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ হাজার ৪৮ লাখ কোটি টাকা (১ রুপি=১.৩২ টাকা ধরে)। দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বিষয়ক আইনজীবী ও ব্লগার ড্যারেন অলিভার একটি বিশেষ মডেল ব্যবহার করে এই হিসাব বের করেছেন।

খবর ইকনোমিক টাইমসের।

খবর অনুসারে, অলিভারের এই মডেল ২০১৮ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল। সে বছর সুইজারল্যান্ড তার অন্য নাম ইসওয়াতিনি বাতিল করে।

অলিভারের ওই মডেলে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ব্যয়ও অন্তর্ভূক্ত। তার মডেলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নাম বদল হলে বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (Large Corporations) যথেষ্ট পরিমাণে রিব্র্যান্ডিং করতে হবে। এ ধরণের ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে কোম্পানিগুলোর মোট রেভিনিউর ৬ শতাংশ পর্যন্ত। এটি একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বাজেটের ১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

গত ৩১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে শেষ হওয়া অর্থবছরে ভারত সরকার প্রায় ২৩ লাখ ৮৪ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব আহরণ করেছে। এর বিপরীতে নাম পরিবর্তনজনিত ১৪ হাজার কোটি রুপি ব্যয় বড় কোনো বিষয় নয়। তবে উন্নয়নশীল এই দেশে এখনো অনেক মানুষ অর্ধবেলা খেয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হয়। কয়েক কোটি মানুষ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য সুবিধা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত। এসব বিবেচনায় নাম পরিবর্তনজনিত ব্যয়টি অনেক বেশি। অলিভারের মতে, ভারত সরকার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বছরে যে অর্থ ব্যয় করে, নাম পরিবর্তন করা হলে তারচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে।

নাম পরিবর্তনের জন্য যে শুধু তাৎক্ষণিক বড় ব্যয় হবে, শুধু তা নয়-কয়েক শতাব্দি ধরে গড়ে উঠা ব্র্যান্ড ভ্যালুর দিক থেকেও দেশটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা শশি থারুর তার এক্স একাউন্টে (সাবেক টুইটার) বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তার পোস্টের মূল বক্তব্য হচ্ছে- ইন্ডিয়া নাম বাদ দেওয়া হলে বছরের পর বছর ধরে তৈরি হওয়া ব্র্যান্ড ভ্যালুর এত বেশি ক্ষতি হবে যে, তা পরিমাপ বা হিসাব করা সম্ভব নয়। তার মতে, ভারত ও ইন্ডিয়া-দুটি নামই বহাল থাকা উচিত।

উল্লেখ, চলতি মাসেই ভারতে জি২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে অংশনেওয়া অতিথিদেরকে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এক নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান দ্রৌপদী মুর্মু। এই আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ কথাটি লেখা আছে। বিদেশি অতিথিদের দেওয়া আমন্ত্রণপত্রে অতীতে কখনোই এমনটি লেখা হয়নি। সবসময় লেখা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তা নিয়ে তুমুল আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংসদের জরুরী অধিবেশন আহ্বান জনিত বিষয়। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এ অধিবেশন শুরু হবে, চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই জরুরী অধিবেশন কেন আহ্বান করা হয়েছে স্পিকার বা সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিরোধী দলগুলো মনে করছে, নাম পরিবর্তনের জন্যই এই জরুরি অধিবেশ আহ্বান করা হয়েছে। কারণ গত কয়েকদিন আগে মাত্র সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষ হয়েছে। এখন এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নেই, যার জন্য সংসদের জরুরি অধিবেশ আহ্বান করা প্রয়োজন।

বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, তারা আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে হঠাতে ইন্ডিয়া নামে একটি জোট গঠন করার কারণেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার খাপ্পা হয়ে ইন্ডিয়া নামটিই বাতিল করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

তবে নরেন্দ্র মোদির সরকার ও বিজেপি-উভয়ে নাম পরিবর্তন ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। চারদিকে বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনা ও বিতর্ক সত্ত্বেও তারা টু শব্দটি পর্যন্ত করছে না।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *