ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার রাতে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও এখনও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে। আবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দিয়েও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ এসব স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দেশে হঠাৎ ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ফলে যেসব মা-বাবা সন্তানকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো বা অবসর কাটাতে গ্যাজেট ও ইন্টারনেটকেই একমাত্র উপায় মনে করতেন, তারাও বিকল্প খুঁজছেন। শিশুবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বিকল্প পথটাই শিশুর জন্য জরুরি। মানে শিশুর গ্যাজেট বা ইন্টারনেটে আসক্তি কমাতে তাকে স্বাভাবিক বাস্তব জীবনে অভ্যস্ত করাতে হবে।

‘আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ’- এই কথার গুরুত্ব বা সারকথা কিন্তু অনেক গভীর। আমরা সবাই আমাদের ভবিষ্যৎকে অর্থাৎ আগামীর দিনগুলোকে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত দেখতে চাই। কিন্তু শুধু চাইলেই তো হবে না। সেই চাওয়া অনুরূপ কাজও করতে হবে। ভালো ফল পেতে চাইলে ভালো বীজও বপন করতে হয়।

সেই বীজ থেকে ভালো গাছ হবে, তবেই তো পাওয়া সম্ভব ভালো ফল। অর্থাৎ সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে লালন করতে হবে। তবে বর্তমানে সময়ের যে প্রান্তে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে থেকে একটি শিশুকে সঠিকভাবে লালন-পালন করে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ।

একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাব আমরা সবাই আমাদের অবসর যাপনের অনেকটা সময় ব্যয় করছি এই ইন্টারনেটের পেছনে, যার মারাত্মক কুফল হিসেবে দেখা দিয়েছে শিশুদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি। যে সব বাচ্চা স্মার্টফোন তথা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত এবং দিনের বেশকিছু সময় অতিবাহিত করে এই ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে তাদের একটা নামকরণও করা হয়েছে। আর তা হল স্ক্রিনজার। এই স্ক্রিনজার বাচ্চাদের জীবন এখন নানারকম হুমকির সম্মুখীন। এরা বিকালে মাঠে খেলতে যেতে পছন্দ করে না। প্রকৃতির সবুজ রঙ তাদের দৃষ্টি কাড়ে না।

সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বসে মোবাইল অথবা ট্যাবে ব্যস্ত থাকে। এতে করে বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে, যা রীতিমতো চিন্তার বিষয়। এই বাচ্চারা কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও তাদের চোখ স্থির থাকে মোবাইলে। একই রুমে বসে একজন অন্যজনের সঙ্গে কথা বলে না। কারণ একটাই- প্রযুক্তির ব্যবহার। ফলে তারা অনেকাংশেই অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে। সময়ের আগে অনেক কিছুই তাদের চিন্তা-চেতনাকে যেমন আবিষ্ট করছে, তেমনি ব্লু হোয়েলের মতো অদ্ভুত ভয়ঙ্কর কিছু গেম যা অনেক বাবা-মাকেই ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

নিত্যনতুন তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা অবশ্যই ভালো, তবে তা যদি বাচ্চাদের অবসর যাপন অথবা খেলাধুলার একমাত্র সঙ্গী হয়, তবে তা কিন্তু চিন্তার বিষয় অবশ্যই। সময় থাকতেই এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে বাবা-মাকেই। কারণ এই যে ইন্টারনেট, এর আসক্তি কিন্তু ভয়াবহ। অনেক সৌন্দর্যের মধ্যে থাকা কালো তিলের মতো।

শুধু শিশু নয়, বড়দের একটি বিরাট অংশও এখন অনলাইনে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। বর্তমান ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তারা সময় কাটাতে উপকারী কিছু বিষয়ে মনযোগী হতে পারেন-

ধ্যান করুন

মন ভালো রাখতে ও কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে ধ্যানের উপকারিতা অনেক। নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুণ উপকারী। বিশেষ করে ধ্যান মানসিক চাপ কমাতে ও প্রশান্তির অনুভূতি বাড়ায় বলে মত মনোবিদদের। তাই যখনই খানিকটা অবসর পাবেন, তখনই ধ্যান করুন।

বই পড়ুন

সময় কাটাতে বই পড়ার চেয়ে ভালো বিকল্প হয়তো আর নেই! তাই কিছুটা সময় পেলে ভালো একটি বই পড়ুন। দেখবেন আপনার সময় কাটবে দ্রুত। আর বিরক্তিবোধও করবেন না। সময় কাটানোর একটি মজার উপায় হতে পারে বই পড়া। এক্ষেত্রে আপনি পছন্দসই বই খুঁজে সেগুলো পড়ুন।

ঘর সাজান
আপনি যদি ঘর সাজাতে পছন্দ করেন, তাহলে এটিই হলো মোক্ষম সময়। আপনার পছন্দ অনুযায়ী ঘর সাজিয়ে ফেলুন। এক্ষেত্রে পুরোনো জিনিস ঘর থেকে সরিয়ে নতুনভাবে ঘর সাজান।

লিখুন
অনেকেই আছেন, যারা লিখতে পছন্দ করেন, তবে সময় না পাওয়ার কারণে লেখালেখি আর হয়ে ওঠে না। তাই অবসর কাটাতে জার্নাল লেখাও হতে পারে আনন্দের খোরাক। ইন্টারনেট ব্যবহার না করে সৃজনশীল হওয়ার একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে এটি।

ব্যায়াম করুন
সময়ের অভাবে যারা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে পারেন না, তারা চাইলে অফলাইন থাকাকালীন কিছুটা সময় ব্যায়াম করুন। এতে শরীরও যেমন ভালো থাকবে, আবার মনের স্বাস্থ্যও থাকবে ফুরফুরে।

সেলাই শিখুন
সেলাই একটি ব্যবহারিক দক্ষতা, যা অবসর সময়ে শিখতে পারেন খুব সহজেই। আপনার ঘরের কেউ যদি সেলাইয়ের কাজ পারেন, তাহলে তার কাছ শিখে নিতে পারেন মজার এই ব্যবহারিক দক্ষতা।

শুধু ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেই নয়, বরং ইন্টারনেট আসক্তি কমাতে দৈনন্দিন জীবনে এসব কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজন ছাড়া আপনি যে সময়টুকু অনলাইনে কাটাবেন, তার চেয়ে অফলাইনে থেকে এসব কাজ করুন। এতে শরীর ও মন দুটোই থাকবে সতেজ।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...