গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেন রুশ বাহিনীর হাত থেকে কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করতে পারলেও সম্প্রতি আর তেমন সাফল্য দেখা যাচ্ছে না৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় এমন ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ভুল জায়গায় ইউক্রেনের সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে৷
মার্কিন ও অন্যান্য পশ্চিমা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছে এনওয়াইটি৷ তাদের মতে, ইউক্রেনের দক্ষিণে অত্যন্ত কম সৈন্য মোতায়েন করায় আজভ সাগরের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে নিজস্ব বক্তব্য পেশ করেন৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কেউ কি আদৌ জানে, দেশের পূর্বে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ, কত সংখ্যক দখলদারী রয়েছে?’ তাঁর মতে, পূবের কিছু যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের ঢিলেমির জন্য রুশ সেনাবাহিনী অপেক্ষা করে রয়েছে৷ সেটা ঘটলেই তারা আরো এলাকা দখল করতে চায়৷ জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা খারকিভ, ডনবাস, পাভলোরাদ বা দিনিপ্রো ছেড়ে দেবো না৷’
উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার এলাকা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ তা ছাড়াও ইউক্রেনীয় বাহিনীকে খারকিভ, সুমি ও বেলারুশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তও রক্ষা করতে হচ্ছে৷
এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু সাফল্যের দাবি করছে ইউক্রেন৷ দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেছেন, রাশিয়ার বিমান ঘাঁটির উপর সাম্প্রতিক হামলা চালিয়ে ইউক্রেন কমপক্ষে চারটি টিইউ-২২ বম্বার যুদ্ধবিমান অকেজো করে দিয়েছে৷ দুটি বিমান ধ্বংস হয়েছে, আরো দুটি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন৷ সম্ভবত আরো একটি বিমানেরও ক্ষতি হয়েছে৷ এক রেডিও সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান৷
বুদানভ বলেন, রাশিয়ার ভূখণ্ড থেকেই কিছু মানুষ বিমান ঘাঁটির উপর হামলা চালিয়েছে৷ রুশ কর্মকর্তারাও শনিবার ও সোমবার দুটি হামলার কথা স্বীকার করেন৷ তবে শুধু প্রথম হামলায় একটি যুদ্ধবিমানের ক্ষতি হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন৷ মঙ্গলবার ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র অনুযায়ী রাশিয়া সম্ভবত টিইউ-২২ এমথ্রি নামের সুপারসনিক যুদ্ধবিমান হারিয়েছে৷ এমন বিমান পরমাণু অস্ত্র বহনেও সক্ষম৷
রাশিয়ার ভূখণ্ডে বেড়ে চলা হামলার কারণে মস্কোও কিছুটা উদ্বিগ্ন৷ বিশেষ করে মস্কোকে ঘিরে রাজধানী অঞ্চলে পর পর ড্রোন হামলার প্রচেষ্টা অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে৷ বৃহস্পতিবারও তিনটি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে বলে রাশিয়ান এয়ার ডিফেন্স বাহিনী জানিয়েছে৷ ইউক্রেন সীমান্তের কাছে ব্রিয়ানস্ক এলাকার উপর সেই অভিযানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা সম্পর্কে রাশিয়া কিছু জানায়নি৷ বুধবার সীমান্তের কাছে বেলগোরোদ শহরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় তিন জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় গভর্নর জানিয়েছিলেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি