পশ্চিমবঙ্গের সনাতনধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা । আরজি করের ঘটনায় এবারের পুজো আনন্দে ভাটা পড়েছে । যখন পশ্চিমবঙ্গ উৎসবে মাতার কথা সেখানে প্রতিবাদমুখর গোটা কলকাতা। ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে পুজো আয়োজনে সরকারি নগদ সহায়তা প্রত্যাখান করা হচ্ছে । প্রায় আড়াই হাজার ক্লাব সরকারের টাকার আবেদন করছে না। টাকা প্রত্যাখানের মধ্য দিয়ে আসলে মুখ্যমন্ত্রীকেই বয়কট করছে তারা। এবারের পুজো যেন প্রতিবাদী পুজো তেমনটি আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে ।
নির্ভরশীল সু্ত্র জানিয়েছে , প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গাপূজা উদযাপন করার জন্যে ৮৫ হাজার টাকা করে প্রতিটা ক্লাব বা পুজো কমিটিকে দেয়া হয়। আর এই অনুদান এর প্রচলন করেছে মমতা ব্যানার্জি, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে। পুরো রাজ্য জুড়ে ছোট বড়ো মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজারের মতো ক্লাব দীর্ঘদিন থেকে এ সুবিধা বা অনুদান নিয়ে আসছিলো। কিন্তু এবার আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ স্বরূপ প্রায় বেশিরভাগ ক্লাব ও পূজা কমিটি এ অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে। পুজো শুরুর আর এক মাসও হাতে নেই, কিন্তু এখন পর্যন্ত ২৫ শতাংশ ক্লাব বা পুজো কমিটি অনুদানের জন্যে আবেদন করেনি। তাই বলা যায় ৩০ শতাংশের উপরে ক্লাব বা পুজো কমিটি এবার পুজোর অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে। কোনো কোনো ক্লাবে অনুদান এলেও তা উত্তোলনে নাকচ করে দিয়েছে সেই ক্লাবের পূজা উদযাপন কমিটি।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় যে আন্দোলনের ঝড় উঠেছে, সেটার প্রভাবেই কি এরকম হল? সেই কথাই এখন ভারতজুড়ে আলোচনায় উঠেছে ।
জানা গেছে, দুর্গাপুজোর জন্য ২০২৩ সালে রাজ্য সরকারের থেকে অনুদান পেয়েছিল কলকাতার ২,৭৫৭টি কমিটি। সেগুলির মধ্যে এবার এখনও পর্যন্ত ৬৭০টি কমিটি অনুদানের জন্য আবেদন করেছে বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতবার যে পুজো কমিটিগুলি রাজ্যের থেকে অনুদান পেয়েছিল, সেগুলির মধ্যে ২৫ শতাংশ কমিটিও এবার পুজোর অনুদানের জন্য আবেদন করেনি।
অন্যদিকে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান ৮৫ হাজার টাকা প্রত্যাখান করল কলকাতার আরও এক পুজো কমিটি। যাদবপুর সন্তোষপুরের মহিলা মজলিশ রাজ্য সরকারের দেওয়া ৮৫ হাজার টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর জি কর আবহে ক্রমশ বাড়ছে অনুদান প্রত্যাখানের তালিকা। মূলত দাবি আদায় ও নির্যাতিতের পাশে দাড়ানোর অংশ হিসেবে সরকারের টাকা প্রত্যাখান করছে পুজো কমিটি ।
যাদবপুর সন্তোষপুরের ক্লাবটি মহিলা পরিচালিত। সম্প্রতি অনুদান প্রত্যাখ্যান প্রসঙ্গে ওই পুজো কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণা গুহ এক সংবাদ মাধ্যমে বলেন, আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকেই আমাদের কারও মন ভাল নেই। সঙ্গে রাজ্যের যা অবস্থা তাতে বড় করে পুজো করার মতো মানসিক অবস্থাও আমাদের নেই। মণ্ডপসজ্জা, আলো-সহ প্রতিমার বায়না হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তা তো আর ফেরানো যাবে না। তাই এ বছর আড়ম্বরহীন ভাবেই আমরা মা দুর্গার পুজো করব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পুজোয় এ বার সে ভাবে জাঁকজমক হচ্ছে না। যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এমনটা করা হচ্ছে। তাই সকলে আমরা সরকারি অর্থ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সন্তোষপুরের কমিটির মতো গত শনিবার সরকারি অনুদান প্রত্যাখান করেছে দক্ষিণ কলকাতার আরও একটি পুজো কমিটি। বেহালার অক্ষয় পাল রোডের মধ্যপাড়া আবাহনী ক্লাব রাজ্য সরকারের ৮৫ হাজার টাকা প্রত্যাখান করেছে। ওই ক্লাবের পুজো এবার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পড়েছে। কিন্তু সুবর্ণ জয়ন্তীর পুজোয় থাকছে না কোনও জাঁকজমক। অভয়া বিচার পেলে আগামী বছর ফের উৎসব হবে বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে, রবিবারই পানিহাটি সোদপুর এলাকার বোধিকানন ক্লাব পুজো কমিটিও দুর্গার ভান্ডারের ৮৫ হাজার টাকা অনুদান না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
এছাড়া পুজোয় অনুদান না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে নেতাজিনগর বাস্তুহারা সমিতি। অনুদান না নেওয়ার তালিকায় রয়েছে বেহালার সবেদা বাগান ক্লাবও। এছাড়া পুজোর অনুদান প্রত্যাখান করেছে – উত্তরপাড়ার বৌঠান সঙ্ঘ, উত্তরপাড়া শক্তি সঙ্ঘ, আপনাদের দুর্গাপুজো, কোন্নগরের মাস্টারপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, তারকেশ্বরের আর এক ক্লাব, জয়নগর মজিলপুর পুরসভার ৭ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণপুর সন্ন্যাসীতলা মহিলা দুর্গোৎসব কমিটি এবং কলকাতার মুদিয়ালি আমরা ক’জন ক্লাব। পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি ক্লাবও রয়েছে এই তালিকায়।