এখন থেকে কোনো ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ঋণখেলাপি হলেও স্বতন্ত্র পরিচালকরা খেলাপি হবেন না। আগে প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়ে গেলে স্বতন্ত্র পলিচালরাও ঋণখেলাপি হতেন।
রোববার (১২ জানুয়ারি) জারি করা এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩-এর ১৬ (৫) ধারা অনুযায়ী কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালকরা ঋণখেলাপি হবেন না।
এতদিন এনবিএফআইগুলো তাদের পর্ষদে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিত। তবে এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্যানেল থেকে নিয়োগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার ইস্যু করে সব তফসিলি ব্যাংককে পরিপালনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালকদের মূল কাজ হচ্ছে আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা।
‘কিন্তু পরিচালনা পর্ষদে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত হলেও স্বতন্ত্র পরিচালকদের পক্ষ থেকে নোট অভ ডিসেন্ট [ভিন্নমত] পাওয়া যেত না। তাই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও অধিক ক্ষমতা দিয়ে এই সার্কুলার ইস্যু করা হয়েছে।’
ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক রাখার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপির কারণে স্বতন্ত্র পরিচালক ঋণখেলাপি হওয়ায় অনেক দক্ষ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষও খেলাপি হয়ে যান। তাই নতুন করে নীতিমালায় তারা খেলাপি হবেন না, এমন সুবিধা দেয়া হয়েছে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালকের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বতন্ত্র পরিচালকের প্যানেল প্রস্তুত করবে। সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও যোগ্য ব্যক্তির নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পাঠাতে পারবে। নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদেরকে প্যানেলভুক্ত করবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র পরিচালকের জন্য আবেদন করবে। আমরা তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ দেব। তবে তারা যাদের নাম প্যানেলে অন্তর্ভুক্তির তালিকা পাঠিয়েছে, সেখান থেকে নিযুক্ত করা হবে না।’
‘স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ শূন্য হলে তা অনধিক তিন কর্মদিবসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে। স্বতন্ত্র পরিচালকের মেয়াদ বিদ্যমান মেয়াদ শেষ হওয়ার ন্যূনতম ৩০ কর্মদিবস পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের অনিয়ম দেখা গেলে বা স্বাধীন মতামত প্রদান বাধাগ্রস্ত হলে অথবা পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে মতামতের প্রতিফলন না হলে স্বতন্ত্র পরিচালক অবিলম্বে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিতভাবে জানাবেন বলেও উল্লেখ করা হয় সার্কুলারে।
‘প্রয়োজনে, পরিচালনা পর্ষদের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার প্রদত্ত নোট অভ ডিসেন্টের কপি তিনি সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবেন। স্বতন্ত্র পরিচালক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কোনোরূপ গ্যারান্টিপত্রে স্বাক্ষর করবেন না,’ বলা হয় এতে।