সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

 

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আর্থিক খাতে শক্তিশালী জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত না হলে টেকসই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি ও সুশাসন’ বিষয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবি সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান ও সিইও শুভাশীষ বসু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের বিজনেস অ্যান্ড গভর্নমেন্ট স্কুলের একাডেমিক প্রোগ্রাম লিডার ইয়ানকা মোজেস।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়ের পাশাপাশি এর পরিবেশগত, সামাজিক ও নৈতিক দিকগুলোও দেখতে হবে। প্রতিবেদনে দেখানো কোম্পানির টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই পরিমাপযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য হতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হয়েছে। এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতের বিকল্প নেই। দুর্নীতি কমানোর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবেশগত ও সামাজিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নেও জোর দিতে হবে।

অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে টেকসই ধারণাটা বেশি দিনের না হলেও আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন টেকসই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছি। দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ আছে; ঘাটতি আছে প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই রিপোর্টিং–পদ্ধতিতে, প্রশ্ন আছে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও। সে জন্য আমাদের দক্ষ নেতৃত্ব ও নিরীক্ষকদের মাধ্যমে সব সমস্যা চিহ্নিত করে সমন্বিত টেকসই রিপোর্টিং–প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।

ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বলেন, পুরো আর্থিক ব্যবস্থাকেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে পেশাগত নিরীক্ষকদের বড় ভূমিকা আছে। তারা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই টেকসই প্রক্রিয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।

মূল প্রবন্ধে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের একাডেমিক প্রোগ্রাম লিডার ইয়ানকা মোজেস বলেন, করপোরেট খাতে সুশাসন ও জবাবদিহির দুর্বলতা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের হার বাড়ছে। যেমন নিউজিল্যান্ডে অস্ত্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় মাদক খাতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা হয়। বেশি কার্বন নিঃসরণ করে, এমন কোম্পানিতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনেক দেশ বেশি সুদহার নির্ধারণ করছে। এসব কারণে বিশ্বে টেকসই বিনিয়োগ সম্পদের (সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্ট এসেট) পরিমাণ বাড়ছে।

নিরীক্ষকদের উদ্দেশে ইয়ানকা মোজেস আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে টেকসই ও জবাবদিহিনির্ভর পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। এ সময় রানা প্লাজা দুর্ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান ও মুনাফার চিত্রের পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠান এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছে কি না, সেটাও প্রতিবেদন তৈরির সময় দেখতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে আইসিএবি সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই যেন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে চলে, সে লক্ষ্যে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদেরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি টেকসই প্রতিবেদন তৈরির ধরনেও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *