নভেম্বর ১৩, ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আদালতে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আলমগীর হোসেনের আদালতে তাকে তোলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাবেক বিচারপতি মানিককে আদালতে তোলার সময় অনেকে তার দিকে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এ সময় কয়েকজন হামলার চেষ্টাও চালান। পরে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে তাকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।

এর আগে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সিলেটের কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী দনা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে আজ ভোরের দিকে সিলেটের কানাইঘাট দনা সীমান্ত বিজিবি ক‍্যাম্পের সদস্যরা তাকে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিচারপতি মানিক নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত-সমালোচিত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে উপস্থাপিকার সঙ্গে অত্যন্ত বাজে আচরণ করে তিনি ব্যাপক আলোচনায় আসেন।

সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় বিচারপতি মানিকের নামে নোয়াখালীর আদালতে মামলা হয়েছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন। একই অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে আইনজীবী মো. জিয়াউল হক বাদী হয়ে আরেকটি মামলার আবেদন করেন। আদালত অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিচারপতি মানিককে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।

জান গেছে, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরের দিকে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক স্থানীয় দালাল সাদ্দামসহ অন্যদেরকে টাকা দিয়ে সীমান্ত দিয়ে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার সহযোগিতা চান। বিকালের দিকে দনা সীমান্ত এলাকা পাড়ি দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। প্রবেশের পর একটি টিলার মধ্যবর্তী স্থানে কলাগাছের পাতার মধ্যে তাকে শুয়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কিছু লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তার নাম শামসুদ্দিন মানিক বলে পরিচয় দেন। দালাল সাদ্দাম কানাইঘাটের পাতিছড়া গ্রামের রফিকুল হোসেনের ছেলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দালাল সাদ্দামের খোঁজে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সাবেক বিচারপতি মানিককে বলতে শোনা গেছে, টাকা লাগলে তিনি দেবেন। তার ভাই-বোন দেবেন। আমি এ দেশে এত কষ্ট করে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?

আটকের সময়ের আরও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক বিচারপতির গলায় গামছা বেঁধে হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন একজন ব্যক্তি। আরেকজন তার নাম জিজ্ঞেস করছেন। এ সময় বিচারপতি মানিক তার পুরো নাম বলেন এবং বাড়ি মুন্সীগঞ্জ বলে জানান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিচারপতি অনেকটা অসহায় হয়ে বলতে থাকেন, আমার কাছে ছিল ব্রিটিশ এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড। ভয়ে দেশ ছেড়ে যাচ্ছিলাম। এখানকার দুই যুবক বলেছিল, ১৫ হাজার টাকা দিলে সীমান্ত পার করে দেবে। ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর সেই দুই যুবক ভারত সীমান্তে আমাকে নিয়ে যায়। সীমান্তে নিয়ে মারধর করে আমার কাছে থাকা ৬০-৭০ লাখ টাকা এবং মোবাইল নিয়ে যায় তারা। মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়লে কলার পাতার ওপর শুইয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, দনা পাতিছড়া গ্রামের রফিকুল হোসেনের ছেলে সাদ্দামের সহায়তায় অবৈধভাবে শুক্রবার বিকেলের দিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে তাকে দনা বিজিবির সদস্যরা আটক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। সাদ্দাম হোসেনের বসত বাড়িটি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তঘেঁষা। সে ভারতে অবৈধভাবে বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রবেশ করে থাকে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...