বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মালিকানাধীন ভবনের কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া বাবদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে তাঁর ব্যাংক হিসাবে কয়েক লাখ ডলার পাঠানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী কয়েক দফায় এ অর্থ বাংলাদেশে আসে এবং এ অর্থের ট্যাক্সও পরিশোধ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। যদিও চুক্তির সময়ে তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন না। তবে বিপত্তি বাঁধে কোম্পানিটির অংশীদারদের মধ্যে দ্বন্দ সৃষ্টি হলে। এ অর্থ নিয়ে কোম্পানিটির অংশীদারদের মধ্যে দ্বন্দের বিষয়টি তিনি শুরুতে জানতেন না। এরপর বিষয়টি তাঁর নজরে আসলে সেটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মীমাংসার জন্য তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। অথচ ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধ পথে আসা এ অর্থকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) নামের একটি সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, ২০২০ সালে মোনার্ক হোল্ডিংস আইএনসি নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে ২ লাখ ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার পাঠানো হয়। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের মালিকানাধীন একটি ভবনে দুই ফ্লোরের ভাড়ার চুক্তি অনুযায়ী এ অর্থ কয়েক দফায় তাঁর ব্যাংক হিসাবে পাঠায় কোম্পানিটি। তবে পরবর্তীতে মিং গ্লোবাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ অর্থ নিজেদের বলে দাবি করেন। এর প্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে আসা এ অর্থ নিজ উদ্যোগে আদালতে জমা দেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। বর্তমানে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে আমি অর্থ পেয়েছি বলে ওসিসিআরপি একটি খবর প্রকাশ করেছে, যেটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। মূলত একটি বৈধ ইজারা চুক্তির অধীনে অগ্রিম ভাড়া, নিরাপত্তা জামানত এবং অগ্রিম নির্মাণ ব্যয় বাবদ ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৪ ডলার আমার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়েছে। এটা আমি বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে এ টাকা এনেছি। একইসঙ্গে আমি এই অর্থের ট্যাক্সও পরিশোধ করেছি, যা আমার ট্যাক্স ফাইলে রয়েছে। যখন কোম্পানিটির একজন অংশীদার আমাকে জানালো তাদের মধ্যে দ্বন্দ হয়েছে এবং তারা এই অর্থের দাবি করে, তখন আমি তাদের বললাম তোমাদের তো আমি চিনি না। তখন এ বিষয়ে মীমাংসার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মামলা করেছি। বিষয়টি এখনো বিচারাধীন। কেউ কি ভাড়াটিয়ার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানে? যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে কিভাবে জানবো? জানার পরেই আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। আমার যদি খারাপ উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে আমি কি এই টাকা দেশে আনতাম? আর আমার বৈধ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে এনেছি। এটাতো অন্যায় করিনি। আমি যদি বিদেশে টাকা পাচার করতা বা হুন্ডি করতাম, তাহলে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতো। অবৈধ কিছু করার ইচ্ছে থাকলে কেউ কি দেশে টাকা আনে, তাও ব্যাংকিং চ্যানেলে?
তিনি আরও বলেন, আমাকে অপদস্ত করার জন্য কিছু অসাধু চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অপপ্রচার করছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসেবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এতে অনেকেই আবার মনক্ষুন্ন হয়। ফলে এসব ব্যক্তিরাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ইন্ধন জোগাচ্ছে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে অনেক দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আপনারাই দেখেছেন বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বর্তমান কমিশন অনেকগুলো কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করেছে, যারা অনেকেই তুলনায় বেশ শক্তিশালী। এসব কাজগুলো মোটেই সহজ ছিলো না। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিন লভ্যাংশ না দেওয়া অনেকগুলো কোম্পানি ওটিসিতে ছিল। তারা বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে নিজেদের ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছিলো। আমি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে বিএসইসির প্রধান হিসেবে এসব কোম্পানির মালিকদের চোখের কাঁটা হয়েছি।
জানা গেছে, ওসিসিআরপি নামের একটি সংস্থা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা এ অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই সংস্থাটির আড়ালে রয়েছে আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি জুলকারনাইন সায়ের খান ওরফে সামি। বিএসইসির চেয়ারম্যানের অভিযোগ, ওসিসিআরপি থেকে তাঁর কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। আর চাঁদা না পেয়ে দেশের শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জুলকারনাইন সায়ের এবং অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন প্রজেক্ট।
প্রসঙ্গত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে ফের সক্রিয় হচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। বিদেশ থেকে কথিত সাংবাদিকতার নামে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে বেশকিছু ব্যক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। এ কাজে জড়িতরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে অর্থ দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। চাঁদা না পেলেই শুরু হয় তাদের অপপ্রচার। এই অপপ্রচার থেকে রেহাই পাননি দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানও।