ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান কমিটি গঠনসহ তিন দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের পক্ষ থেকে।

আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) এ ব্যাপারে দেওয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশের প্রত্যয়িত অনুলিপি হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম।

এর আগে চুক্তির বৈধতা নিয়ে করা রিট ও সম্পূরক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৯ নভেম্বর রুলসহ আদেশ দেন। এরপর পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ করা হলো।

তিন দফা নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান গঠন করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বরের চুক্তির (ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি) বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে আদেশ গ্রহণের এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। কমিটি গঠনের ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

দ্বিতীয় দফা নির্দেশনায় ওই চুক্তি সম্পাদনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করে আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে (বিবাদী) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

তৃতীয় দফা নির্দেশনা অনুসারে, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বরের ওই চুক্তি সম্পাদনের আগে নেগোশিয়েশন (দর-কষাকষি নিয়ে আলোচনা), যদি হয়ে থাকে, সে–সংক্রান্ত সব তথ্য এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদেশে বলা হয়েছে, আদালতের আদেশ গ্রহণ করার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যানকে এসব তথ্য দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য আদানি লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বরের চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১২ নভেম্বর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম আবেদনকারী।

রিটের দায়ের করার পর সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন রিটকারী আইনজীবী। রিট ও সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে রুল ও নির্দেশসহ ১৯ নভেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেদিন আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম নিজেই শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান, কামরুন নাহার মাহমুদ ও আফরোজা ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ভারতের অন্যান্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ অনেক কম টাকায় পায়। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে যে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়, তার দর প্রতি ইউনিট হিসেবে ৫ দশমিক ৫ টাকা পড়ে। ভারতের অন্যান্য বেসরকারি খাত থেকে বাংলাদেশ যে বিদ্যুৎ নেয়, তার খরচ ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ৫০ পয়সা করে পড়ে। অথচ আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিতে ইউনিট প্রতি ১৪ টাকার বেশি খরচ পড়ে। এমনকি নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে মোট খরচ পড়ছে ইউনিট প্রতি মাত্র আট টাকা। আদানির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে দর-কষাকষি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে গণমাধ্যমে এসেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...