সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদে উঠছে আজ মঙ্গলবার। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় পর্ষদের বৈঠক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ঋণ কর্মসূচির আওতায় দেওয়া শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজস্ব আয় সম্ভব না হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করায় দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া আইএমএফ মিশন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, আইএমএফের বোর্ড সভায় দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হবে। ফলে শিগগির এই কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে চলতি মাসে আরও প্রায় ৮০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে ডিসেম্বরে এসব সংস্থার কাছ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার পাওয়ার আশা করছে সরকার। এসব অর্থ যুক্ত হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বাড়বে।

আইএমএফ অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় এ বছরের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। অনুমোদনের পরপরই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় করে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত জুনভিত্তিক বিভিন্ন সূচকে শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ অক্টোবর আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি মিশন ঢাকায় আসে। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের সঙ্গে টানা ১৬ দিন বৈঠক করে। তবে রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিশনকে জানানো হয়, অন্যান্য শর্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে দুটি শর্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। নির্বাচনের পর এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে।

একই কারণ দেখিয়ে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণে মার্চ পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়। অন্যান্য শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে গত ১৯ অক্টোবর বিবৃতিতে মিশন জানায়, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য প্রথম পর্যালোচনা শেষ করতে বিভিন্ন নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রথম পর্যালোচনা শেষ হলে বাংলাদেশ দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পাবে। তবে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফ মিশন সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে মানে তারা দ্বিতীয় কিস্তির ছাড়ের সুপারিশ করেছে। তাই দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যেটুকু জানা গেছে, দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদনের সময় ডিসেম্বরভিত্তিক রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হবে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির ক্ষেত্রে নির্বাচন বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির যুক্তিতে কিছুটা ছাড় পাওয়া গেলেও নির্বাচনের পর অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে। পরবর্তী কিস্তিগুলোর জন্য ছাড় নাও পাওয়া যেতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় কিস্তি ছাড় হবে ডিসেম্বরভিত্তিক অগ্রগতির ওপর। ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতে পারে সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার।

গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয় আইএমএফ। কিন্তু বছর শেষে সেই লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *