ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের উপর আলোচনা সভার আয়োজন করে। মঙ্গলবার (১৩ জুন) ঢাকার নীলক্ষেত অঞ্চলের রুহুল কুদ্দুস মিলনায়তন সন্ধ্যা ৭ টায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি।
উক্ত অনুষ্ঠানে জাতীয় বাজেটের আয়কর বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য (কর) রঞ্জন কুমার ভৌমিক এফসিএমএ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোঃ মুসফিকুর রহমান এফসিএমএ জাতীয় বাজেটের উপর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার (চ.দা.) মোঃ মশিউর রহমান এসিএমএ, শুল্ক ও ভ্যাট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রধান অতিথি এম এ মান্নান এমপি তার বক্তৃতায় প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের সকল ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন আমরা বিশ্বব্যাপী করোনা সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছি তাই ভালো সময় আসন্ন। অচিরেই বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে এবং ভাল সময় অবশ্যই আসবে। আমাদের আশাবাদী হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতি তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে: রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও কৃষি। ইতোমধ্যে আমরা কৃষিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছি এবং বাকি দুটিতেও আমরা উন্নতি করতে পারব। আমাদের গ্রামীণ এলাকায় বিনিয়োগের ওপর জোর দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি পেশাজীবীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে তিনি ব্যক্ত করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর দিক্নির্দেশনা এবং আমাদের সকলের কঠোর পরিশ্রমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চালেঞ্জসমূহ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। ডক্টর সেলিম তিনটি উপস্থাপনার উপরই বক্তব্য রাখেন এবং সামগ্রিক বাজেট প্রস্তাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নজর দেওয়া উচিত। সুষ্ঠু রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি, অভ্যন্তরীণ বাজার বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনা করা উচিত এবং আমাদের সমালোচনামূলক দিকগুলির সংস্কারের দিকে বিশেষ মনোনিবেশ করা উচিত। বর্তমান চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমাদের বেশি প্রবৃদ্ধির দিকে না গিয়ে মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনায় অধিক গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। তিনি আশাবাদী যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং আমাদের সকলের কঠোর পরিশ্রমে বাংলাদেশ এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে।
প্রেসিডেন্ট, আইসিএমএবি মোঃ আবদুর রহমান খান এফসিএমএ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। খান বলেন, আইসিএমএবি’র ভিশন হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য কস্ট এবং ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং পেশার প্রচার ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। এ রূপকল্প জাতির পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও স্মার্ট দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নের সাথে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জাতীয় বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইসিএমএবি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়ে এনবিআরের কাছে বেশ কিছু গুরত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেছিল। খান আনন্দের সাথে যোগ করেন যে, আইসিএমএবি পদত্ত বেশ কিছু প্রস্তাব, প্রস্তাবিত আয়কর আইন, ২০২৩ এবং প্রস্তাবিত অর্থ বিল, ২০২৩ -এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সভায় আইসিএমএবি’র সচিব মোঃ কাউসার আলম এফসিএমএ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আইসিএমএবি’র প্রাক্তন প্রসিডেন্ট ও বর্তমান কাউন্সিল সদস্য আরিফ খান অনুষ্ঠানে সেশন চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত থেকে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিচক্ষণতারসঙ্গে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
সরাসরি এবং ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক আইসিএমএবি’র সদস্য এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।