

রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকা এবং আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তিসহ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বেড়ে প্রায় এক বছর আগের অবস্থায় ফিরেছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ায় গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, শুক্রবার চূড়ান্ত হিসাব শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, বৃহস্পতিবার দিনশেষে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে ২২ বিলিয়ন ডলার।
গত মে মাসে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত একমাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে তিন বিলিয়ন ডলার। আর এর সাথে অর্থনীতিতে স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ২০২১ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে হয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর বহু দেশের কাছেই বাংলাদেশের এই সাফল্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দেয়।
কিন্তু মহামারিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কমতে শুরু করে রিজার্ভ।
গত জুন মাসে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের গ্রস রিজার্ভ নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। এরপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। নভেম্বরে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়নে। এরপর ডিসেম্বরে কিছু বাড়লেও জানুয়ারি থেকে তা আবার কমতে শুরু করে। মে মাসে নেমে ১০ বছর আগের অবস্থায় চলে যায়।
রিজার্ভ বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ এবং আরও কয়েকটি উৎস থেকে ঋণের ডলার যোগ হয়েছে। আর এরসঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ মিলিয়ে বৃহস্পতিবার দিন শেষে চূড়ান্ত হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে স্বর্ণসহ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২৭ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার। এর ৩৫ বছর পর ২০০৬-০৭ অর্থবছরে রিজার্ভ পাঁচ বিলিয়নে উন্নীত হয়।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নানা পদক্ষেপ নেয়ায় হুহু করে বাড়তে শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশের রিজার্ভের ইতিহাসে স্মরণীয় একটি বছর হিসেবে দেখা হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরকে। ওই বছর রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছায়।
এরপর তিন অর্থবছরের মধ্যেই রিজার্ভ দ্বিগুণ হয়ে যায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ বিলিয়ে ডলারে উঠে যায়। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৬ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ পৌছায় রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের রিজার্ভের সর্বোচ্চ রেকর্ড।