সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের ঘোষিত কর্মসূচি অসহযোগ আন্দোলন শুরুর দিনেই রংপুর ও হবিগঞ্জে সংখ‌্যালঘু সনাতন ধর্মের ২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরা, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড়সহ আরো বেশ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের দোকান ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। রবিবার দিনভর সংঘর্ষের পর রাতে এসব তথ্য পাওয়া যায়। সংখ্যালঘু নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, হিন্দুদের মন্দিরসহ বিভিন্ন শহরে থাকা দোকানপাটে হামলা হতে পারে। তারা সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আন্দোলনকারীরা দেশে অশান্তি চরমে পৌঁছে দিতে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করা ছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন দিক দিয়ে হামলাকারীরা রবিবার ছক কষেই মাঠে নামে এবং দিনের শুরুতেই হামলা বাস্তবায়নে রীতিমত সফল হয়েছে। শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়, তারা থানা পোড়ানো, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে হামলা, ভাংচুর করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, রবিবার হামলায় রংপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগ নেতা হারাধন রায় আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। হবিগঞ্জ শহরে রিপন শীল নামে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কানু তিওয়ারির বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জির ভাই বাবুল চ্যাটার্জি এবং তার প্রতিবেশি সুকান্ত চক্রবর্তীর দোকান ভাংচুর ও লুট করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নির্মল চ্যাটার্জির গ্রামের বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুর এলাকায়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সারাদেশে অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। রবিবার সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক শচীন্দ্র নাথ বাড়ৈ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনে পুলিশসহ অসংখ্য ছাত্র, সাংবাদিক, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ গভীর উদ্বেগ ও বেদনা প্রকাশ করেছে। পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গত বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলনে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক শ্লোগান দেয়ার পর রবিবার সরাসরি হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটলো। এ হামলা সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও ভীতি সঞ্চার করেছে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেছে, জাতির স্বার্থে অচিরেই এই সহিংস পরিস্থিতির অবসান হবে।

এদিকে সনাতনীদের স্বার্থরক্ষাকারী আরেক সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এক চিঠিতে সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ৩টি নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো হল, চলমান পরিস্থিতির দিকে সবাইকে সতর্ক নজরদারি চালাতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় দলবদ্ধভাবে পাহারায় থাকতে হবে এবং যেকোনো বিপদে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

এছাড়াও গত শনিবার সংগঠনটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং অঙ্গসংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে একটি সভা করে। এতে বর্তমান পরিস্থিতি নজরদারির জন্য নির্মল রোজারিওকে আহবায়ক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে সদস্য সচিব করে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল, সাংগঠনকি সম্পাদক সাগর হালদার, এডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী শুভ্রদেব কর।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *