সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে জামিন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই মামলা ৬ মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক ও সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের এ মামলায় আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর জামিন প্রশ্নে গতবছর রুল দিয়ে পরে রুলের শুনানি নিয়ে জামিন দেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্ট জামিনের বিরুদ্ধে চেম্বার কোর্টে আবেদন করলে জামিন আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগে বেঞ্চে প্রেরণ করে আদেশ দেয়। আপিল বিভাগ ছয় মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বলে।

সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও ৬ মাসে বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় বিচারককে গত ২৯ অক্টোবর শো’কজ করেন আপিল বিভাগ। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারককে শো’কজের জবাব দিতে বলা হয়। ওই সময় পর্যন্ত এ মামলার আসামি আশিষ রায় চৌধুরীর জামিন স্থগিত থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। এ হত্যা মামলা ৬ মাসে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার ব্যাখ্যায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেছেন, ২৫ বছর আগের মামলা হওয়ায় প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করতে পারছেন না। অনেক সাক্ষীর হদিসও মিলছে না। আসামী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে হাইকোর্ট জামিন বহাল রেখে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচার আগামী ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলো আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই সময় পর্যন্ত আসামি আশিষ রায় চৌধুরীর জামিন স্থগিত করেন সর্বোচ্চ আদালত।

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রামস ক্লাবের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে। ওই ঘটনায় তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ওই মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে বিচারের জন্য পাঠানো হয় ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকি ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। তবে রুল নিষ্পত্তি করে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে রুলটি খারিজ করে দেয়া হয়। সেইসঙ্গে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন আদালত। এতে মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আইনত আর কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই রায়ের কপি আর নিম্ন আদালতে পৌঁছায়নি। যার কারণে শুরু হয়নি বিচার।

এদিকে বিষয়টির অনুসন্ধান শেষে গত বছরের ২৩ জানুয়ারি একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘নায়ক খুনের মামলা গুম’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূইয়া রাসেল। তবে জবাব না পেয়ে রিট করেন তিনি। ওই রিটের পর মামলার নথি খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপরই ফাইল চলে যায় বিচারিক আদালতে। শুরু হয় বিচার কাজ। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *