চার কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ১৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যুবলীগের সাবেক নেতা জাকির হোসেনের স্ত্রী আয়েশা আক্তার সুমা ওরফে সোমাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রের অনুকূলে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ওই অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেছেন আদালত। যা আসামিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ওই অর্থদণ্ডের টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দিতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায় এমন আদেশ দেন। এ সময় দুদক পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসাবে মো. বশির উদ্দিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামি আয়েশা আক্তার সোমা ওরফে মোসা. সোমার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা’র অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় উল্লেখিত আসামিকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ১৬৪ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আসামিকে অসাধু উপায়ে অর্জিত এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যা আগামী ৬০ দিনের মধ্যে অর্থদণ্ডের টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। অর্থদণ্ডের টাকা জমা না করলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধান অনুযায়ী জরিমানার টাকা আদায়ের জন্য “Warrant for levy of the fine by attachment and sale” জেলা কালেক্টর, ঢাকা বরাবর পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
রায়ে আরও বলা হয়, আসামির সাজা হাজতবাস কারাদণ্ডের মেয়াদ থেকে বাদ যাবে। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’ এর ৪ (২) (৩) ধারার অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম না হওয়ায় আসামিকে উল্লেখিত আইনে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
সাড়ে ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাকিরের স্ত্রী সোমার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।
জাকির হোসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাস্তুহারা জাকিরের পরিবার বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আসে। ঢাকায় তাদের ঠিকানা হয় ডেমরার চনপাড়া বস্তি। ওই বস্তিতে বেড়ে ওঠেন জাকির। ১৯৯১ সালের দিকে জাকির কাকরাইল এলাকায় পায়েল নামে একটি রেস্টুরেন্টে দৈনিক ৩০ টাকা বেতনে গ্লাস বয়ের কাজ নেন। এক বছর পর গ্লাস বয়ের কাজ ছেড়ে মাসে দুই হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন কাকরাইলের ফরিদপুর ম্যানসনের তৃতীয় তলায় ‘টনি ফিল্ম’ প্রতিষ্ঠানের পিয়ন হিসেবে। ওই সময় আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতাকর্মীদের নিয়মিত আড্ডা ছিল কাকরাইলের ফরিদপুর ম্যানসনের নিচে ‘হোটেল ম্যারাডোনা’কে কেন্দ্র করে। সেখানেই ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সঙ্গে পরিচয় হয় জাকিরের। এরপর তারা ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। সম্রাট যাদের দিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন তাদের মধ্যে জাকির অন্যতম।