সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিমের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন ঢালিউড অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার। বিষয়টি অনেকের জানা থাকলেও সামনে আসেনি কখনও। তবে ক্ষমতার পালাবদলের কারণে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো।

শেখ সেলিমের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া ছিলেন নিপুণ। এ নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনের কলাকুশলীদের ক্ষোভ অনেক দিনের। কিন্তু কেউ সেভাবে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেননি। তবে এবার মুখ খুলতে শুরু করছেন তারা।

গণমাধ্যমে তারা তুলে ধরেছেন ২০২২ সালে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী করতে শেখ সেলিম কীভাবে প্রভাব খাটিয়েছিলেন।
২০২২ সালের সেই নির্বাচনে ভোটারদের ভোটে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান। তবে শেখ সেলিম চাইছিলেন নিপুণই বসুক সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে।

২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন হয়। সেবার নির্বাচনে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাথমিক ভোট গণনায় জায়েদ খান জয়ী হন। জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে পরাজিত হন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়ে ভোট পুনর্গণনার জন্য আপিল করেন নিপুণ। কিন্তু সেখানেও একই ফলাফল পায় আপিল কমিটি।

পরে ঘটনা মামলায় গড়ায়। আদালত থেকে রায় নিয়ে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন নিপুণ। তিনি পুরো সময় দায়িত্ব পালন করেন।

অভিযোগ রয়েছে শেখ সেলিমের সরাসরি প্রভাব রয়েছে নিপুণের দাপটের পেছনে। নির্বাচনে তাকে জয়ী করতে নির্বাচন কমিশনারদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখান রাজনৈতিক নেতারা। এমনকি নিপুণকে জয়ী করতে ১৭ বা ফোন করেন শেখ সেলিম।

একাধিক নির্বাচন কমিশনার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। নাম প্রকাশ না করে তাদের একজন বলেন, জীবনের হুমকি ছিল। যেকোনো সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, এমন শঙ্কা ছিল।

তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয় যে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তার মতো লোক। এটা আমাদের অবাক করেছিল।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা পিরজাদা হারুন বলেন, ২০২২ সালের নির্বাচনে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা তাকে মানসিকভাবে এখনো আতঙ্কিত করে। নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী দেখাতে অনেক ওপর থেকে এক ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন। তিনি সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন বলা যায়। কিন্তু আমি সরাসরি ‘না’ বলে দিই।

পরবর্তী সময় মোবাইল ফোনে ভয়ও দেখানো হয়, এমনকি বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানো হয় উল্লেখ করে হারুন বলেন, তখন একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। পরে একটা জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে বড় অঙ্কের টাকা রাখা ছিল। যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। নানা কাণ্ডে আমাকে ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এলে বদলে যান ঢালিউড অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার চলাফেরা বাড়তে থাকে। সেই সময়ই পরিচয় হয় শেখ সেলিমের সঙ্গে। ২০১২ সালে বনানীর অভিজাত এলাকায় নিপুণের গড়ে তোলা নিজস্ব পারলার উদ্বোধন করেন তিনি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *