ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে মেগা সিটি রাজধানী ঢাকা। কারণ যে কোনও সময়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বাংলাদেশে। আর যদি ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলেই ভেঙে পড়বে
ঢাকার প্রায় অর্ধেক বাড়ি। মারা যেতে পারেন প্রায় ৩ লাখের বেশি মানুষ। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে জনবহুল এই নগরীর অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা উঠে এসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের অধীনে পরিচালিত একটি গবেষণায়।
সেখানে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে
ঢাকার প্রায় সাড়ে আট লাখ ভবন ধসে পড়বে। বাংলাদেশের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ভূমিকম্প সহনীয় সবাইকে একসঙ্গে কাজের আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (১ জুন) রাজউক আয়োজিত ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলাবিষয়ক এক সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রকল্পের পরিচালক আবদুল লতিফ হেলালী।
আবদুল লতিফ হেলালী জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে
ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়বে, যা মোট ভবনের ৪০.২৮ থেকে ৬৪.৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া যদি সিলেট লাইনমেন্টে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে ঢাকার ৪০ হাজার ৯৩৫টি থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৪২টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে; যা মোট ভবন সংখ্যার ১.৯১ থেকে ১৪.৬৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মধুপুর ফল্টে যদি সকালের দিকে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে
ঢাকায় দুই লাখ ১০ হাজার থেকে তিন লাখ ১০ হাজার মানুষ নিহত হবে। দুপুরে হলে দুই লাখ ৭০ হাজার থেকে চার লাখ, এবং রাতে হলে তিন লাখ ২০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হবে।
হেলালী বলেন, রাজউক এলাকার অধীনে ঢাকায় ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯টি ভবন রয়েছে, যার মধ্যে পাকা ভবন পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫০৭টি। তিন হাজার ২৫২টি (পাকা) ভবনের উপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে অতি-ঝুঁকিতে থাকা ৪২টি ভবন সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের মাটির নীচে দিয়েই গিয়েছে ‘ফাটলরেখা’ বা চ্যুতি। ফলে সেখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। রাজউক আয়োজিত একটি সেমিনারে, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, প্রতি মাসেই কয়েকটি মৃদু আকারের ভূমিকম্প হচ্ছে। তাঁর মতে, ১২৫ থেকে ১৭৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এখন বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হওয়ার সময় এসেছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ভূমিকম্প সহনীয় নগরায়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প সহনীয় স্থাপনা নির্মাণ এবং ভূমিকম্প সহনশীল নগরায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার এবং জনগণ সবাইকে একসঙ্গে, একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ভূমিকম্প সহানীয় নগরায়নে সমাজের প্রত্যেক স্তরের অংশীজনকে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, দ্রুত নগরায়ন, নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং নৈতিকতার অভাবজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের সকল জেলা শহর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে শহরের উন্মুক্ত স্থানসমূহ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার দ্রুত বৃদ্ধি এবং অভিবাসনের ফলে ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। ঝুঁকি সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন নীতি ও কৌশলসমূহ প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাটিয়ে একটি স্থায়ী ও ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ে তোলা যেতে পারে।