নভেম্বর ১৪, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূল অতিক্রম অব্যাহত রেখেছে। জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। বেশ কয়েকটি জেলা বিদ্যুৎহীন আছে।

১০ নং মহাবিপৎসংকেত কমে আসলেও দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে উপকূলীয় জেলাগুলো। উপকূলের বেশ কয়েকটি এলাকার গাছপালা, ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে গেছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, কৃষি খামারসহ বিস্তীর্ণ মাঠ। এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও ভোলায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে। এরপর উপকূল থেকে শুরু করে সারা দেশে বৃষ্টি শুরু হয়। এখনও তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে কয়রা, খুলনার নিকট অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশঃ বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে পরবর্তী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দূর্বল হয়ে ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম: রিমালের প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। গতকাল রোববার দুপুর থেকে থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। আজ সোমবার ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে।

ঢাকা: প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে রাজধানীতে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

ফেনী: গতকাল রোববার মধ্যরাত থেকে ফেনীতে ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে গাছপালা পড়ে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙে পুরো সোনাগাজী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় এখনো দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাসে রাতেই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে সাগরের নোনাপানিতে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। খাবার পানির উৎসগুলো তলিয়ে গেছে। ফসলের খেত ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।

সাতক্ষীরা: প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব গতকাল রোববার রাত ৮টার দিক থেকে শুরু হয়। এর ফলে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। দমকা বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় কিছু কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। এ ছাড়া কিছু চিংড়ি ঘেরও ভেসে গেছে। শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরে রাত ৩টার পর থেকে দমকা বাতাস ও বৃষ্টি কমে যায়। তবে আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিক থেকে আবার দমকা বাতাস ও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়।

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাগেরহাটের উপকূলজুড়ে প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে বইছে বাতাস। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকার গাছপালা উপড়ে পড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে রয়েছে পুরো জেলা। এছাড়াও জোয়ারে নদী ও খালগুলোর পানি দুই থেকে তিন ফুট বেশি পানি বেড়েছে। বেড়িবাঁধ ও সড়ক উপচে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...