নভেম্বর ১৫, ২০২৪

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হামলায় আরও এক মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি বেশ শক্তিশালী এবং গত শুক্রবার দেশটির ভেতরেই ড্রোনটিকে গুলি করে ভূপাতিত করার এই ঘটনা ঘটে।

অবশ্য হুথিদের হামলায় আবারও ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি মার্কিন সামরিক বাহিনী। শনিবার (২৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের হুথি বাহিনী লোহিত সাগরে একটি তেলের ট্যাংকারে হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে। একইসঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরোধিতায় আরও হামলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি।

হুথি গোষ্ঠীর সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি শনিবার তার সর্বশেষ টেলিভিশন ভিডিও ভাষণে বলেছেন, তারা লোহিত সাগরে ‘ব্রিটিশ তেল জাহাজ অ্যান্ড্রোমিডা স্টারে’ নৌ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে এবং ক্ষেপণাস্ত্রটি সরাসরি ট্যাংকারে আঘাত হেনেছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনীও নিশ্চিত করেছে, ইয়েমেনে সশস্ত্র এই গোষ্ঠটি একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে লোহিত সাগরে তিনটি অ্যান্টিশিপ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং এমভি অ্যান্ড্রোমিডা স্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

জাহাজটি সম্প্রতি সিসিলিসে নিবন্ধিত একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, ‘হামলায় এমভি অ্যান্ড্রোমিডা স্টার সামান্য ক্ষতির কথা জানিয়েছে, তবে হামলার পরও ট্যাংকারটি তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।’

হুথি সামরিক মুখপাত্র আরও বলেছেন, ইয়েমেনে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সাদা গভর্নরেটের আকাশসীমায় একটি ক্ষেপণাস্ত্রসহ মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি এমকিউ-৯ রিপার আক্রমণকারী ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। হামলার সময় ড্রোনটি শত্রুতামূলক মিশনে নিয়োজিত ছিল।

মার্কিন সামরিক বাহিনী অবশ্য এই ড্রোনটির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে মার্কিন সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান সিবিএস নিউজ নিশ্চিত করেছে, একটি এমকিউ-৯ ড্রোন গত শুক্রবার ইয়েমেনের অভ্যন্তরে ‘বিধ্বস্ত’ হয়েছে এবং এই ঘটনায় তদন্ত চলছে।

এই ধরনের একটি ড্রোনের দাম প্রায় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলেও জানিয়েছে সিবিএস নিউজ।

আল জাজিরা বলছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয় কোনও মার্কিন সামরিক ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করল হুথি গোষ্ঠী। এর মধ্যে প্রথমটি গত বছরের নভেম্বরে ভূপাতিত করা হয়। আর হুথিদের হামলায় দ্বিতীয় মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।

মূলত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন জাহাজে হামলা চালাচ্ছে হুথিরা। হুথিদের ঠেকাতে ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যৌথ হামলা চালালেও; সেগুলো তেমন কার্যকরী হচ্ছে না।

এছাড়া হুথিদের হামলার কারণে লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বে সমুদ্র পথে যত বাণিজ্য হয়, তার ১২ শতাংশ এই লোহিত সাগর দিয়ে হয়।

এর আগে হুথিদের ঠেকাতে গত জানুয়ারি মাস থেকে ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য।

হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।

এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...