নভেম্বর ১৪, ২০২৪

বলিউড নামিদামি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সুগন্ধি বা পারফিউমের নানান বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। সেই বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে আমরাও নানা ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকি।

বর্তমানে অফিস হোক কিংবা অনুষ্ঠান যেখানে যান সুগন্ধি ব্যবহার করতে ভুলেন না। আর এই সুগন্ধি ব্যবহারে আমাদের ব্যক্তিত্বে বিশেষ প্রভাব রাখে। শুধু তাই নয়, আত্মবিশ্বাসও বজায় থাকে। তবে আপনি কি জানেন, এই পারফিউম লাগানোর অভ্যাস আপনার জীবনে কতটা মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুগন্ধি ব্যবহারে ক্ষতির মূল কারণ হচ্ছে— রাসায়নিক পদার্থ। এই রাসায়নিকগুলো শরীরে প্রবেশ করে অ্যালার্জির মতো সমস্যা তৈরি করে। বেশিরভাগ পারফিউম ইথানল ও আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে তৈরি হয়, যা বিষাক্ত। কখনো কখনো এর ব্যবহারে ডার্মাটাইটিস সৃষ্টি করে। এর ফলে ত্বকে চুলকানি, লাল ফুসকুড়ি, ফুসকুড়ি বা চুলকানি হয়। কেউ কেউ পারফিউম লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রচুর চুলকানি শুরু করে। একে চিকিৎসকদের ভাষায় ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস বলে।

অনেকেরই এ ধরনের অ্যালার্জি ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেখা যায়। একে বলা হয়— অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস।

দেখে নেওয়া যাক— সুগন্ধির ব্যবহারে কী কী সমস্যা হতে পারে। আপনি ঘড়ি পরে থাকেন, এরপর সুগন্ধি ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এতে ঘড়ির রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়। কল্পনা করুন— একটি সুগন্ধি যা একটি ঘড়িকে বিবর্ণ করতে পারে, তা আপনার ত্বকের কতটা ক্ষতি করতে পারে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা প্রায়শই ঘড়ি বা গহনা পরে পারফিউম লাগানোর কথা ভুল করি। যদি এমন করি, তবে এটি একটি ধাতব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যক্তিটি যোগাযোগের ডার্মাটাইটিসের শিকার হতে পারে। কখনো কখনো এটি ফোসকা ও ফোলা সৃষ্টি করে। পারফিউমের গন্ধ পেলেই কারও কারও মাথাব্যথা শুরু হয়। কেউ কেউ আবার বমিও শুরু করে। অনেক সময় পারফিউম লাগানোর সময় এর ফোঁটা মুখেও প্রবেশ করে। এতে অনেকের পেট খারাপও হয়। ফলে বমি ও ডায়রিয়াও হতে পারে। শিশুরা ভুল করে এটি পান করলে তাদের রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে যায়। একে পারফিউম পয়ঃজনিং বলে। যত তাড়াতাড়ি এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, আপনার অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

পারফিউমে আগ্নেয়গিরির জৈব যৌগ থাকে। এই রাসায়নিক কণা পেইন্টেও পাওয়া যায়। এই কণাগুলো যাদের ফুসফুস দুর্বল তাদের ক্ষতি করে। একই সঙ্গে হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের পারফিউম লাগানো নিষেধ।

বিশ্বের অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সুগন্ধি জিনিস হরমোন প্রভাবিত করতে সক্ষম। যখন পারফিউমের সুগন্ধি শ্বাসের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে উপস্থিত হয়, তখন নিউরনগুলো এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে সংকেত পাঠায়। যার ফলে হরমোনগুলো দ্রুত নিঃসৃত হতে শুরু করে। যখন শরীরে হরমোন অত্যধিক ওঠানামা করে, তখন তারা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে ক্লান্তি, থাইরয়েড, পিসিওএস, অনিয়মিত পিরিয়ড এবং লিবিডোর অভাবের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

পারফিউমে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মানুষের উর্বরতাকে প্রভাবিত করে। একটি গবেষণা অনুসারে, এটি পুরুষদের বন্ধ্যত্বের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে— গর্ভবতী নারীরা গর্ভাবস্থায় ক্রমাগত সুগন্ধি ব্যবহার করলে তা সরাসরি সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। যদি শিশুটি ছেলে হয়, তাহলে গর্ভাবস্থার ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তার প্রজনন ব্যবস্থা প্রভাবিত হতে শুরু করে, যা তাকে ভবিষ্যতে বন্ধ্যত্বের দিকে ঠেলে দেয়। আসলে পারফিউম শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয়। তাই এসব সুগন্ধি ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

তথ্যসূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...