বাংলাদেশ ব্যাংকে বিনা অনুমতিতে সাংবাদিক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানিয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)। এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যাংক লোপাটকারীদেরই উৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির সভাপতি এ কে আজাদ।
শনিবার (৪ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ কে আজাদ এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, দেশে দুর্নীতি বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় দুর্নীতি বাড়ছে। এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় থাকছে না। তাই জবাবদিহিও মিলছে না। এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকেরা হয়রানির শিকার হন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে বিনা অনুমতিতে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ থেকে এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যাংক লোপাটকারীদেরই উৎসাহিত করবে।
সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধক আইনের প্রসঙ্গ টেনে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বর্তমানে দেশে নয়টি আইন রয়েছে, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে। আরও তিনটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এর পাশাপাশি প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের বিষয়টি ধরলে এমন আইনের সংখ্যা হবে ১৩। প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের খসড়া বারবার দেখতে চাওয়া সত্ত্বেও গণমাধ্যমের কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক নেতারা।
মফস্সলের সাংবাদিকদের নানামুখী চাপের প্রসঙ্গে টেনে এ কে আজাদ বলেন, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সমকালের দুজন সাংবাদিককে নিহত হতে হয়েছে। একজন ফরিদপুরের গৌতম দাশ এবং আরেকজন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আবদুল হাকিম। পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতা করা একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা বিদ্যমান। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে অনুযায়ী ২০২৩ সালে ২৯০ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জামালপুরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতে নিহত হয়েছেন গোলাম রব্বানী নামের একজন সাংবাদিক।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান ও দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফা মামুন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকেরা।
আলোচনা সভায় প্রতিপাদ্যের ওপর সূচনা বক্তব্য দেন পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করা দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান প্রতিবেদক পিনাকী রায়।