অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শেয়ারবাজার, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও বিভিন্ন শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজিকারী এবং গুজব রটনা করে মার্কেটকে অস্থিতিশীলকারী চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা বিনিয়োগকারীদের নামে বিভিন্ন সংগঠন করে কোম্পানিতে চাঁদাবাজি করতো। এসব সংগঠনগুলোর বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আর কেউ চাঁদাবাজি করতে গেলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের নামে বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ পুজিবাজার বিনিযোগকারী ঐক্য পরিষদ, এছাড়া পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন, আইসিবি ইনভেস্টর ফাউন্ডেশন, চিটাগাং ইনভেস্টর ফোরাম ইত্যাদি। যেগুলোর পক্ষে দু-চারজন ব্যক্তি সাধারন বিনিয়োগকারীদের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করে বলে অভিযোগ আছে। অথচ ওইসব সংগঠনের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলো থেকে বিভিন্নভাবে কোম্পানিকে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করা হয়। এরমধ্যে অন্যতম-বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাদের ভালো সর্ম্পক্য,তার কাছে অভিযোগ দিলে আইপিও বাতিল হয়ে যাবে; রাস্তায় নেমে বদনাম করা হবে; অনেক গণমাধ্যম তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে, ফলে কোম্পানির নামে খারাপ সংবাদ ছড়াবে ইত্যাদি ভয় দেখানো হয়।
এছাড়া উকিল নোটিশ বাহিনী গড়ে উঠেছে। যারা আইপিওতে আসা কোম্পানিকে রিট করা হবে বলে প্রথম ধাপে উকিল নোটিশ পাঠায়। এরপরে চাঁদা চেয়ে দেন দরবার করে ওইসব নামসর্বস্ব সংগঠনের নেতারা।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন উর রশিদ জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ) এর উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শহীদুল ইসলাম, পিপিএম (বার) এর নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুর রহমান আজাদ, পিপিএম এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চক্রের ৩ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়।
এই ৩ জনের মধ্যে রয়েছেন-
(১) মোঃ আমির হোসাইন ওরফে নুরনুরানী (৩৭)
(২) নুরুল হক হারুন (৫২)
(৩) আব্দুল কাইয়ুম (৩৯)
মোঃ আমির হোসাইন ওরফে নুরনুরানী –
* ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ ও টেলিগ্রামে সব মিলিয়ে ৮-১০ টি গ্রুপ চালায়।
* অন-লাইনে তার অনেক ফলোয়ার।
* বিস্ফোরক দমন আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১টি মামলা রয়েছে।
নুরুল হক হারুন-
“বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ” এর সহ- সভাপতি পদে আছে।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে থেকে চাঁদাবাজি করে।
আব্দুল কাইয়ুম-
* রয়েল ক্যাপিটাল নামক ব্রোকারেজ হাউজের সাথে যুক্ত।
* হোয়াটস্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শেয়ার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
শেয়ারবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। দেশের অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব নিয়ে এসে বিনিয়োগ করে থাকেন। অল্পতেই এখানে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে। একটি স্বার্থান্বেষী চক্র দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়্যারম্যান সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, টেলিগ্রাম এ গোপনীয় গ্রুপ খুলে বিভিন্ন মিথ্যা, ভূয়া এবং প্রতারণা মূলক তথ্য সরবরাহ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধীর জন্য সাধারণ বিনিয়োগ কারীদের প্রতারিত করে আসছে। সাধারণ বিনিয়োগ কারীদের ব্যবহার করে আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে আসছে। এ বিষয়ে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উক্ত মামলায় তদন্ত করে মামলা সংশ্লিষ্ট ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করে।
১। গ্রেফতারকৃত আসামীরা মিথ্যা ও ভূয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, টেলিগ্রামে গোপনীয় গ্রুপ ব্যবহার করে।
২। গ্রুপ গুলোতে আসামীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও পুজি বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নামে মিথ্যা ও ভূয়া তথ্য প্রদান করে বিভিন্ন প্রকার প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) আগে ভাগে প্রকাশ করে দেয় (যা বেশিরভাগ সময় বানোয়াট ও মিথ্যা)। যার ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
৩। বিভিন্ন সময় আন্দোলনের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে রাস্তা দখল করে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে।
৪। তালিকাভুক্ত কোম্পানীতে বিভিন্ন ইস্যুতে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দিলে ঐসব কোম্পানী সম্পর্কে অন-লাইনে অপপ্রচার শুরু করে। এমনকি কোম্পানীর অফিস গুলোতেও হামলা করে।
৫। গ্রেফতারকৃত আসামীরা শেয়ারবাজারে বিভিন্ন শেয়ার নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে এবং এসব করার জন্য গোপনীয় হোয়াটস্যাপ/টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করে।
৬। এসব গ্রুপের সদস্যদের একটি নিদিষ্ট ফি প্রদান করে গ্রুপে যুক্ত হতে হয়। আবার শেয়ারে প্রফিট হলে লভ্যাংশ অংশ দিতে হয়। লোকসান হলে তারা দায়িত্ব নেয় না।
৭। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন অনুযায়ী যেকোন শেয়ারের মূল্য নিয়ে তথ্য আদান- প্রদান সম্পন্ন অবৈধ।
৮। গ্রেফতারকৃত আসামী আমির হোসাইন (নূর নূরানী ছদ্মবেশ নাম ধারণ করে আছে) এর নামে বিস্ফোরক দ্রব্য দমণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১টি মামলা রয়েছে। নুরুল হক হারুন, বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন সদস্যদের একত্রিক হয়ে কোম্পানি গুলোতে চাঁদা বাজি করে।
উল্লেখ্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সর্বদা কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে নিয়মিত ভাবে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো নিয়মিত মনিটরিং এবং সাইবার পেট্রোলিং পরিচালিত হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উস্কানি দিয়ে কেউ যাতে স্বার্থ হাসিল করতে না পারে
সে বিষয়ে অভিযান চলমান রয়েছে।