

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সীমিত আমদানি নীতির বড় প্রভাব পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে। আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায়ে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) নয় মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে ১৫ হাজার ৮০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। পিছিয়ে আছে প্রবৃদ্ধি বিবেচনায়ও। গত বছরের মে মাসে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে দুই শতাধিক বিলাসবহুল পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করে এনবিআর।
আমদানির ভাটার পড়ার প্রভাব পড়েছে মোট রাজস্ব আদায়েও। অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে রাজস্বে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। ৮.৯২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে আছে এখনো ৩৯.০৫ শতাংশ।
এর আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতির বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়ার কারণে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংকট উত্তরণে প্রতিষ্ঠানটির আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগ থেকে নতুন নতুন উদ্যোগের কথা বলা হলেও ফল মিলছে পুরো উল্টো। রাজস্ব সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা বলছেন, অর্থবছরের শুরুতে অতিরিক্ত আমদানিতে রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক প্রভাবে সন্তোষজনক জায়গায় ছিল এনবিআর। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে সীমাবদ্ধতায় সেখানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫০৯ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ২৯ হাজার ৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সেই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ৩৯.০৫ শতাংশ। আর ৯ মাসে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮.৯২ শতাংশ।
রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ খাতে আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯০১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি ১৫.৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ২৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।
এরপরের অবস্থান আয়কর ও ভ্রমণ করের। এ খাতে আদায় করা রাজস্বের পরিমাণ ৭১ হাজার ২২৭কোটি ২২ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯৫৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পিছিয়ে আছে।
আর আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ৬৭ হাজার ৩৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৮০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধিও সবচেয়ে কম মাত্র ৩.৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ আমদানি ভাটা পড়ার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়েও।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) এনবিআরকে বিদায়ী অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। বিদায়ী অর্থবছরে সবমিলিয়ে ৩ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর। ঘাটতি ছিল প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা।
এ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।