বৈশ্বিক নানামুখী সংকটের মধ্যে তিনটি বছর অতিবাহিত করলো অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বধীন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের কার্যকরী নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সংকটময় পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে নানামুখী চাপ, সমালোচনা ও কটুক্তি হজম করতে হয়েছে কমিশনকে।
তবে বিগত তিন বছর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃতত্বাধীন কমিশনের দূরদর্শিতা, উদ্যোগী কর্মকাণ্ড ও কর্ম তৎপরতায় সেই সংকটকে পেছনে ফেলে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুঁজিবাজারে।
তবে কমিশন মনে করে, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বোচ্চ সহযোগীতায় সংকটময় পরিস্থিতি পুঁজিবাজারকে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে গেছে। কিন্তু সূচক দেখলে বুঝা যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় দেশের পুঁজিবাজার অনেক ভালো আছে। ইটিএফ, বন্ড, কমোডিটি এক্সচেঞ্জসহ নতুন নতুন প্রোডাক্ট পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ গ্রহণের ফলে এখন কমিশন অনেক সমালোচিত হচ্ছে। তবে এর সুফল বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে পাবেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কমিশন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই কমিশনের তিন বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সকল সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন বেড়েছে। ২০২০ সালের ৩১ মে ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে। আর বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩২৫ পয়েন্টে। সেহিসেবে ৩ বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ২ হাজার ২৬৫ পয়েন্ট বা ৫৫.৭৯ শতাংশ।
২০২০ সালের ৩১ মে ডিএসইএস সূচক ছিল ৯৫১ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার ডিএসইএস সূচক অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭০ পয়েন্টে। ফলে ৩ বছরের ব্যবধানে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৪১৯ পয়েন্ট বা ৪৪.০৬ শতাংশ।
২০২০ সালের ৩১ মে ডিএস৩০ সূচক ছিল ১ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার ডিএস৩০ সূচক অবস্থান করছে ২ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে। ফলে ৩ বছরের ব্যবধানে ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ৮৩৩ পয়েন্ট বা ৬১.০২ শতাংশ।
২০২০ সালের ৩১ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। আর সেহিসেবও বাজার মূলধনের উন্নতির কথাই জানাচ্ছে। এই সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বা ১৪৪.৩৪ শতাংশ।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বিগত তিন বছরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃতত্বাধীন কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নিচে বিএসইসির সেই উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হলো-
করোনা পরিস্থিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে পুঁজিবাজার খোলা রাখা, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব প্রক্রিয়া (আইপিও) সহজ করা, সকল তফসিলি ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিযোগ বাড়ানো, আইপিওতে কোম্পানির শেয়ার আনুপাতিক সমবন্টন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ও এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না থাকা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া বা নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোকে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে বাধ্য করা, উৎপাদনে না থাকা কোম্পানিগুলোকে উদ্যোক্তা বা নতুন উদ্যোক্তাদের হাতে দিয়ে উৎপানমুখী করা, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন ব্রোকার হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির একাধিক শাখার অনুমোদন দেওয়া, বিদেশে ও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ব্রোকার হাউজের ডিজিটাল বুথ স্থাপন করা, বিশ্ব ব্যাংক ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সার্বিক অটোমেশন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা, বিভিন্ন তথ্য অনলাইনে জমাদান করা সহ ইভোটিং ও ই-এজিএম চালু করা, বৈশ্বিক সংকটে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা, পুঁজিবাজারে অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্ণীতি প্রতিরোধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম বাড়ানো; পুঁজিবাজারের ব্র্যান্ডিং এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী বাড়াতে বিভিন্ন দেশে রোড শো আয়োজন করা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করা, মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে শৃঙ্খলা বৃদ্ধি ও লভ্যাংশ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ, বন্ড মার্কেট উন্নয়নে ইসলামি গ্রিন সুকুকের পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বন্ডেরও লেনদেন চালু করা, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় শেয়ারের বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার- ২০২২ প্রদান, এসএমই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ সহজীকরণ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠন ও স্ট্রাটেজিক পার্টনার নির্ধারণে সহায়তা করা, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেট ফান্ড (ইটিএফ) ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) গঠনে আইন প্রণয়ন, বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) মাধ্যমে ফেরত প্রদান, চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব বা ভীতি ছড়ানো কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ, মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তকরণ, ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখার কারণে স্তিমিত থাকা নতুন বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে আনতে নগদ লভ্যাংশ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনালের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করে কমিশন।