বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ১৫ জন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবু হাসান বাদী হয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় মামলাটি করেন তিনি।
এতে অভিযুক্তরা হলেন- ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমেন দত্ত, একই শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবরার শাহরিয়ার, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মীর্জা খবির সাদাফ খান, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম সাঈদ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিজান শেখ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব জাবেদ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী অনুপ সরকার আকাশ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তায়েব পাঠান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আলম আকাশ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুজ্জামান ওমর, ২০২০-২১ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সমাজতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হানসহ অজ্ঞাত আরও ৪০ জন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে মিছিল করেন। এ সময় অভিযুক্ত সৌমেন দত্তের নেতৃত্বে এজাহারনামার থাকা বাকি আসামিরা ধারালো রামদা, চাপাতি, লোহার রড, স্ট্যাম্প ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালান। সেখানে সৌমেন দত্ত একটি স্ট্যাম্প দিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাহাবুবুর রহমানের মাথায় আঘাত করেন। এতে তার মাথা ফেঁটে যায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। এছাড়া আরেক অভিযুক্ত মোহাম্মদ নাইম কাঠের লাঠি দিয়ে মাহাবুবুরকে এলোপাথাড়ি বাড়ি মেরে তার পিঠ থেঁতলিয়ে দেন।
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, অন্যান্য অভিযুক্তদের হাতে থাকা ধারালো দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন এবং সবাইকে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকেন। এছাড়া তারা আন্দোলনে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তাও করেন। এমনকি আন্দোলন থেকে সরে না দাঁড়ালে তারা প্রাণনাশেরও হুমকি দেন৷
এ বিষয়ে বাদী মো. আবু হাসান বলেন, সেদিন আমরা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার হয়ে যাওয়ার সময় অভিযুক্তরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে আমার বন্ধু মাহবুবর রহমান গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় ১৫ জনসহ ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হাটহাজারী থানায় মামলা করেছি। বেশ কিছু অভিযুক্তের নাম না জানার কারণে তাদের পরিচয় মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। তবে তদন্ত শেষে পরবর্তীতে বাকিদের ব্যাপারেও পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ কিছু শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান নামে এক ছেলেকে আটক করে আমাদের হাতে তুলে দেন। এরপর আমরা তাকে চালান করে দিয়েছি। তার নামে একটি মামলাও হয়েছে। মামলার বাকি অভিযুক্তদের তদন্ত শেষে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।